ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিরল এসএমএ রোগ

শনাক্তকরণে জেনেটিক ল্যাব স্থাপন জরুরি
বিরল এসএমএ রোগ

অসুখ-বিসুখ মানুষের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। পুরোপুরি সুস্থ মানুষ পাওয়া কল্পনার বিষয়। ওষুধে অসুখ সারে; কিন্তু রোগটি যদি এমন হয় যা আদৌ শনাক্তকরণেরই ব্যবস্থা নেই। আর শনাক্ত করা গেলেও শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য দরকার ২২ কোটি টাকার একটি ইনজেকশন। এর ব্যত্যয় ঘটলে মা-বাবার চোখের সামনেই শিশুটি জন্মের দুই বছরের মধ্যে মারা যায়। এমনই এক বিরল রোগের নাম স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (এসএমএ)। আর এই রোগে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার শিশু মারা যাচ্ছে। কিন্তু এই রোগ শনাক্তকরণ ও গবেষণার কোনো ব্যবস্থা দেশে নেই। শনাক্ত করতে একটি জেনেটিক ল্যাব দরকার, যেটি প্রায় ২ কোটি টাকা হলেই প্রতিষ্ঠা করা যায়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এসএমএ শনাক্ত করার ব্যবস্থা আছে। আর বাংলাদেশের এসএমএ আক্রান্তদের শনাক্ত করতে হয় ভারতে নমুনা পাঠিয়ে। রিপোর্ট পেতে এক মাস লাগে। এটা পরীক্ষা করতে ২০ হাজার টাকা লাগে। তবে পরীক্ষা না করালেও কিছু উপসর্গ দেখে এই রোগ সম্পর্কে চিকিৎসকরা ধারণা করতে পারেন। বিরল এই রোগে আক্রান্ত শিশুকে বাঁচানোর মতো সামর্থ্য এই দেশের কম মানুষেরই আছে।

এসএমএ একটি জটিল জিনগত রোগ। এই রোগে আক্রান্ত শিশুরা বসতে বা দাঁড়াতে পারে না। তবে তাদের বুদ্ধি সাধারণ বাচ্চাদের চেয়ে বেশি থাকে। কিন্তু শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও জটিলতার কারণে এসব শিশু চিকিৎসা না পেলে বছর দুইয়ের মধ্যে মারা যায়। এটি একটি জেনেটিক ডিসঅর্ডার, যেটি মূলত মোটর নিউরন সংলগ্ন স্নায়ুগুলোকে অক্ষম করে দেয়, ফলে এসব স্নায়ু নিয়ন্ত্রিত মাংসপেশিগুলো তাদের কর্মক্ষমতা হারায়। সাধারণত শরীরে যেসব মাংসপেশি শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে, খাবার খেতে, বসার সক্ষমতায়, হামাগুড়ি দেয়ার ক্ষেত্রে এবং সর্বোপরি হাঁটতে পারার জন্য কার্যকরি, এসএমএ আক্রান্ত হলে সেসব পেশি দুর্বল হয়ে যেতে যেতে এক সময় পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে যায়। উল্লেখ্য, ভারতে প্রতি ৬ থেকে ১০ হাজার শিশুর মধ্যে একটি শিশু এসএমএ আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। বাংলাদেশে এই বিরল এসএমএ রোগের জন্মের হার আরও বেশি হবে বলে চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন। ২০১৭ সালে দেশে প্রথম এসএমএ রোগে আক্রান্ত শিশু শনাক্ত হয়। তথ্য অনুযায়ী, ধনী-গরিব সব পরিবারের শিশুই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। দেশে কোনো কোনো পরিবারের তিনজন শিশু এ বিরল রোগে আক্রান্ত। দেশে এ পর্যন্ত এসএমএ আক্রান্ত ৬০ থেকে ৭০টি শিশু শনাক্ত হয়েছে। দেশে যেহেতু রোগ শনাক্তের জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, তাই বিদেশে নমুনা পাঠাতে হয়। অনেকে পরীক্ষা করানোর টাকা জোগাড় ও শনাক্ত করতে করতেই দুই বছর পার করে ফেলেন। এ সময়ের মধ্যে শিশুটি মারা যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসএমএ রোগটি দ্রুত শনাক্ত হওয়া প্রয়োজন। তাহলে রোগীর পরিবার চিকিৎসাসেবা পেতে আর্থিক প্রস্তুতি নিতে পারবে। আমরা জানি, সরকার স্বাস্থ্য খাতে বিপুল বরাদ্দ রাখছে। সেক্ষেত্রে রোগটি শনাক্তকরণে জেনেটিক ল্যাব স্থাপন করাই যেতে পারে। আর এই ল্যাবটি স্থাপন বিপুল অর্থেরও প্রয়োজন হয় না। রোগটি শনাক্ত করা গেলে অভিভাবকরা চিকিৎসার ব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি নিতে পারতেন। তাই দ্রুত ল্যাব স্থাপনে ব্যবস্থা নেয়া হোক। পাশাপাশি এই রোগটি নিয়ে সবার সচেতনতা জরুরি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত