রাজধানী ঘিরে বৃত্তাকার নৌপথ

প্রকল্পটি আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি?

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীতে যানবাহনের চাপ কমাতে চারপাশ ঘিরে বৃত্তাকার নৌপথ চালুর উদ্যোগ নেয়া হয় ২০০০ সালে। উদ্দেশ্য, এই নৌপথে ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সহজে যাতায়াত করা। এরই ধারাবাহিকতায় এই নৌপথে ২০০৪-২০১০, ২০১৩-২০১৪ সর্বশেষ ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পাঁচ দফা ওয়াটার বাস ও লঞ্চ নামানো হলেও কিছু দিনের মধ্যে পানির দুর্গন্ধে যাত্রী সংকটে সব ক’টি উদ্যোগ ভেস্তে যায়। অর্থাৎ প্রকল্পটি শুরু হওয়ার ২২ বছর পরও এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এই সময়ে প্রকল্পের কাজ হয়েছে ৫৫ ভাগ। বিষয়টি দুঃখজনক। উপরন্তু কবে শেষ হবে রাজধানীর চারপাশজুড়ে ১১০ কিলোমিটারের বৃত্তাকার নৌপথের কাজ- এর সঠিক কোনো জবাবও মিলছে না। মূলত তিন পর্বে কাজটি চলমান। প্রথম পর্ব শেষে এখন দ্বিতীয় পর্বের কাজের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের জুলাইয়ে। তবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময় বাড়াতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হচ্ছে। আর প্রকল্পের তৃতীয় অংশের অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে কতদিনে অনুমোদন হবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, ২০৩০ সালের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হলেও উদ্দেশ্য সফলে রয়েছে নানা অনিশ্চয়তা।

লক্ষণীয় যে, দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের পর প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও সংশ্লিষ্টরা নৌপথের সাফল্য নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, ঢাকার নদীগুলোর পানি বছরের বেশিরভাগ সময় ভয়াবহ দূষণে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এই পরিস্থিতিতে কাজ শেষে নৌযান চালুর পর দুর্গন্ধের কারণে যাত্রী না পাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রকল্পে পানিদূষণ রোধে কোনো ধরনের পরিকল্পনা এমনকি বাজেটও রাখা হয়নি। তা ছাড়া আশুলিয়া-ডেমরা অংশে ১৩টি নিচু সেতুর কারণে বর্ষা মৌসুমে যাত্রী-পণ্যবাহী যানবাহন চলতে পারবে না। নাব্য সংকট তো রয়েছেই। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৪ হাজার ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটির সুফল নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। সংগত কারণেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, তাহলে কি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করা বিপুল অর্থ জলে যাচ্ছে! প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুফল পেতে হলে সময় লাগবে কমপক্ষে আরও ১৫ বছর, অর্থাৎ ২০৩৮ সাল পর্যন্ত। দীর্ঘ এই সময়ে নদীর দখল উচ্ছেদ, নাব্য সৃষ্টি, দূষণ রোধ, কলকারখানায় ইটিপি স্থাপনসহ নিচু সেতুগুলো অপসারণ নিশ্চিত করা গেলেই যাত্রী-পণ্য পরিবহন সচল করা সম্ভব। এখানেও প্রশ্ন, তাহলে কি প্রকল্পটির গোড়াতেই গলদ ছিল? অর্থাৎ অসম্পূর্ণ প্রকল্প নিয়েই কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করেছে?

এদিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, বৃত্তাকার এই নৌপথে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, তুরাগ ও বালু- এই পাঁচ নদীর ৯০ ভাগ এলাকা এরই মধ্যে দখলমুক্ত হয়েছে। যদিও পরিবেশবিদরা বলছেন, নদী তার আগের জায়গা ফিরে পায়নি। আর যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথাযথ সমীক্ষা ছাড়া প্রকল্প নেয়া ও দ্রুত কাজ শুরুর কারণেই অর্থের অপচয় হওয়ার পাশাপাশি কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অভিযোগগুলো পর্যালোচনা দরকার। আর এটাও বিবেচনায় নিতে হবে যে, নৌপথ কখনও একা টিকে থাকতে পারে না, এর সঙ্গে সড়কের একটি সমন্বয় থাকতে হয়। নৌপথে এসেই যেন যাত্রী আরেকটা বাহন পেয়ে যায়, কোনো কষ্ট করতে হয় না- তাও বিবেচনায় নিতে হবে। এই নিয়ে উন্নত দেশগুলোর প্রকল্পগুলো আমলে নেয়া প্রয়োজন। রাজধানী ঘিরে নৌপথ একটি ইতিবাচক উদ্যোগ, এটা দ্রুত বাস্তবায়িত হোক- এটি সবার প্রত্যাশা।