ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাতির পিতার জন্মদিন

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আমাদের প্রেরণা
জাতির পিতার জন্মদিন

বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অচ্ছেদ্য সত্তা। তিনি বাংলাদেশের স্থপতি, তিনি জাতির পিতা। বাঙালি জাতির পরিপূর্ণ আত্মপরিচয় নির্মাণ এবং বাংলাদেশের জন্ম তার অবিস্মরণীয় কীর্তি। একজন নেতা অপরিসীম সাহসিকতায় দেশের লাঞ্ছিত-বঞ্চিত কোটি মানুষের হৃদয়ে যেভাবে মুক্তির বাণী স্ফুরিত করেছিলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে তা বিরল। তিনি বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা। এ দেশের সর্বস্তরের মানুষের তথা আবালবৃদ্ধবনিতার ভালোবাসা, হৃদয় উজাড় করা শ্রদ্ধা ও সম্মানে অভিষিক্ত। আজ এই মহান নেতার ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ আজকের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে যেন হাজার বছরের শৃঙ্খলিত বাঙালির মুক্তির দিশা নিয়ে জন্ম হয় বঙ্গবন্ধুর। তখন সময়টি ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ রাজত্বের শেষ অধ্যায়। তিনি বেড়ে ওঠেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন আর পূর্ববঙ্গের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের মহতি লক্ষ্য ধারণ করে। ফলে আজীবন তাকে একটি সংগ্রামী বাতাবরণের মধ্যেই চলতে হয়েছে। তার এই সংগ্রামের পথ এ দেশের জনজীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে চলছে মুজিবশতবর্ষ উদযাপন কর্মসূচি। করোনাকালের বিঘ্নতার কারণে উদযাপনের সময়কাল বর্ধিত করা হয়, যা ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলমান। বাংলাদেশের জনগণ যথাসম্ভব নানা আনুষ্ঠানিকতায় এই কীর্তিমান বাঙালিকে স্মরণ করছে। শুভদিনে আলোকিত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তার প্রতি রইল শ্রদ্ধা ও হৃদয়ের অর্ঘ্য।

আমাদের সৌভাগ্য যে, বঙ্গবন্ধু এ দেশে জন্মেছিলেন, এ দেশকে ভালোবেসেছেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমরা যদি তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়ি, তাহলে দেখব কৈশোর থেকেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং রাজনৈতিক সচেতনতা ও প্রজ্ঞায় তিনি তার সময় থেকে এগিয়ে ছিলেন। স্বভাবতই তিনি তার সময়ে শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, একে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী প্রমুখের স্নেহধন্য ছিলেন। ব্রিটিশ বিতাড়নের পর এ দেশের জনমানুষের ওপর পাকিস্তানিদের ঔপনিবেশিক শোষণ এবং সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিরোধে যে আন্দোলন শুরু হয়, তার অগ্রকাতারে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ’৭০-এর নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। জেল-জুলুম ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে তিনি সর্বদা বাঙালি জাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত থাকেন। ’৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায় বাঙালি জাতি। এতে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের ম্যান্ডেট লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এই নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাঙালির বিজয়কে মেনে নেয়নি। ’৭১-এর মার্চে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর এ ঐতিহাসিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেদিন গোটা বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিপীড়িত ও পরাধীন মানুষের মুক্তি সংগ্রামের এক মহাকাব্য। স্বভাবতই ইউনেস্কো এই ঐতিহাসিক ভাষণটিকে বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় বহমান গ্রোতধারার মতো বঙ্গবন্ধুর নাম এ দেশে সর্বদা উচ্চারিত হবে। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে স্বীকৃত। বাঙালির জন্য একটি স্বাধীন দেশের তিনিই প্রথম রূপকার। আজ পৃথিবীর মানচিত্রে বাঙালির আবাসভূমি বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। আজ তার দেখানো পথে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। দেশের মানুষ অকৃত্রিম ভালোবাসায় প্রতিনিয়ত তাকে স্মরণ করছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আমাদের প্রতিদিনের প্রেরণার উৎস।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত