সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসামাজিক প্রচারণা

আবু আখের সৈকত

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আমাদের দেশে গুজব রটনা ও সত্য-মিথ্যা যাচাই ব্যতিরেকে তা ঢালাওভাবে প্রচারের প্রবণতা বিদ্যমান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে তা হয়েছে আরও সহজতর। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিনিয়ত রটিত গুজবের ওপর ভিত্তি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চর্চা ব্যাপক হারে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দিনে দিনে এর ব্যাপকতা প্রকট হারে বাড়ছে। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর একটি বিরাট অংশ ভিত্তিহীন এ গুজবগুলোর বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

গুজব এর সংজ্ঞায় বলা হয়ে থাকে, কোনো ঘটনা সম্পর্কে লোকমুখে প্রচারিত সত্যতা যাচাইবিহীন কিছু কথা বা ব্যাখা। গুজব নানা ধরনের হতে পারে। তবে এখানে প্রধানত দুটি ধরনের উল্লেখ করা যাক। যেমন, অতীত ঘটনা নিয়ে প্রচারিত গুজবকে ভূতাপেক্ষ গুজব, অন্যদিকে ভবিষ্যৎ ঘটনা নিয়ে প্রচারিত গুজবকে ভবিষ্যাপেক্ষ গুজব বলা হয়।

সবচেয়ে সাম্প্রতিক যে ইস্যুটি নিয়ে গুজব রটনা করা হয়েছে, তা হচ্ছে- ‘সুলতান’স ডাইন’ নামক একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান, যেটি বিশেষত কাচ্চি বিরিয়ানির জন্য জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট এবং ভোক্তাদের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে, সেই প্রতিষ্ঠানটি নাকি তাদের খাবারে পশুর মাংস দিয়ে থাকে। একজন ভোক্তা সম্প্রতি এমনটিই দাবি করেছিলেন। এর কোনোরূপ সত্যতা যাচাই ব্যতীত একজন ভোক্তার শুধু এই একটি কথার ভিত্তিতে এ ইস্যুটি যেন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করল। যে যেভাবে পারল সেভাবেই প্রচারে নেমে পড়ল। পুরো ফেইসবুকজুড়ে এ বিষয়টি সয়লাব হয়ে গেল। যদিও বা পরবর্তী সময়ে গত ১৩ মার্চ দৈনিক প্রথম আলোতে ‘সুলতান’স ডাইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি’ এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যার মাধ্যমে এই ভিত্তিহীন অপবাদের অপসারণ ঘটে। এই যে কোনো একটি বিষয় নিয়ে কেউ একটি বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং সেটার সত্যতা যাচাই ব্যতিরেকে এটা নিয়ে মাতামাতি কোনো সুফল বয়ে আনে না। বরং যেই ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে এই বিভ্রান্তিগুলো ছড়ানো হয়, তারা আসলে দীর্ঘ একটা সময় খুব সংকটময় সময় অতিক্রম করে। অন্যদিকে কে বা কারা এগুলো ছড়ায়, হয়তো ক্ষণিকের একটা ভালোলাগা কাজ করলেও, আসল সত্যটা বেড়িয়ে আসলে, তখন তা মূলত নিজের অজ্ঞতাকেই জাহির করতে যথেষ্ট।

সেইসঙ্গে, অনেক ক্ষেত্রে স্বার্থান্বেষী কোনো গুষ্টি কর্তৃক এসব গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা ব্যতিক্রম কিছু নয়। সুপরিচিত কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান অথবা একটা বিষয় সম্পর্কে একটা চাঞ্চল্যকর তথ্য ছড়িয়ে দিলেই অনেক ক্ষেত্রে এটা বাতাসের বেগে যেন সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।

মহামারি কোনো ভাইরাস যেমনটা দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে, এই গুজবগুলো অনেকটা একই রকম, মহামারির বেশে ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। আবার বিগত বছরগুলোতে বিশেষ করে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে, করোনাভাইরাস নিয়েও বেশ গুজব ছড়ানো হয়েছিল। যেমন, এটা চীনের কৃত্রিমভাবে তৈরি একটা ভাইরাস, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক চীনকে পঙ্গু করার একটা চাল, আবার অনেকে বলেছিলেন চীনারা বাদুড়ের স্যুপ খায়, যার ফলে তাদের মধ্য থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি ইত্যাদি। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে চলে গেলেন অমুক তারকা, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন অমুক তারকা এ জাতীয় উদ্ভট কন্টেন্টের সংখ্যাও কম নয়।

গুজব যেহেতু একটি সামাজিক ব্যধিতে পরিণত, তাই এর উৎপত্তি ও প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি থেকে যতটা দূরে থাকা সম্ভব হবে, তত দ্রুত একটা স্মার্ট সমাজ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে এগিয়ে যাবে জাতি। সনামধন্য ব্যক্তি আর প্রতিষ্ঠানগুলো পরিত্রাণ পাবে সাময়িক বিব্রতকর পরিস্থিতিগুলো থেকে। সেইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কন্টেন্টগুলোও হবে আস্থা আর নির্ভরতার প্রতীক।

শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]