ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী

মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম সাদিক
দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী

রমজান আত্মশুদ্ধি, নৈতিক প্রশিক্ষণ ও আত্মগঠনের মাস। প্রতি বছর রমজান আসে মুসলমানের জীবনকে পরিশুদ্ধ এবং পাপমুক্ত করার জন্য। রমজানের রোজা তাকওয়ার গুণ অর্জন এবং ইবাদতের অবারিত সুযোগ বয়ে আনে। বাংলাদেশে রমজান মাসে বাড়তে থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য; যা এর মধ্যেই প্রত্যক্ষ হচ্ছে পণ্যবাজারে। বিশ্বের একমাত্র মুসলিম দেশ যেখানে রমজান মাস এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। রমজান মাসে একশ্রেণি অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও দ্রব্যসামগ্রীর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। গোটা বিশ্বেই পণ্যের দাম কিছুটা বৃদ্ধি হলেও বাংলাদেশে তা কয়েক গুণ বেশি। দ্রব্য উৎপাদনের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলেও যোগাযোগের সমস্যা পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি, পরিবহণ খরচ এখন দ্বিগুণেরও বেশি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে চড়া হওয়ায় দেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে। সেই অনুপাতে মানুষের আয় বাড়েনি বরং গড় আয় কমেছে ২০ শতাংশ। এতে রোজাদার সাধারণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও স্বল্প আায়ের মানুষকে নিদারুণ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অথচ অবৈধ মজুদদারির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা ইসলামে নিষেধ।

প্রতিবছর আমাদের দেশে রমজান মাস আসলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য হয় আকাশচুম্বী। এ বছর পণ্যের দাম যেন লাগামহীন ঘোড়ার মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে রমজানকে উপলক্ষ্য করে সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীরা আরেক দফা মূল্যবৃদ্ধি করলে সাধারণ মানুষের ওপর তার ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রোজার মাসে কেন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে? উত্তরে বলা হবে যে, চাহিদা বাড়ছে তাই জোগান স্বল্পতায় ভারসাম্য আনতে গিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আদৌ কি তাই? পণ্যগুলো কী পরিমাণ লাগবে এগুলো কি আমাদের অজানা? কোনো কোনো দ্রব্য কী পরিমাণে দরকার তা জানা থাকলে, কেন পণ্যের জোগান স্বল্পতা দেখা যায়? কেন দাম হু-হু করে বেড়ে যায়? নাকি কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করে জোগান স্বল্পতার দোহাই দিচ্ছি আমরা? চাহিদা অনুযায়ী বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে পূর্ণমাত্রায় ভারসাম্য বজায় থাকবে। শুধু পর্যাপ্ত জোগান নিশ্চিত করলেই হবে না, সব পেশার মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর লক্ষ্য রেখে সরকারকে পণ্যের ন্যায্য মূল্য ঠিক করে দিতে হবে।

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশই রমজান উপলক্ষ্যে দ্রব্যমূল্যের সহজলভ্যতার জন্য প্রায় ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে থাকে। কিন্তু বিষয়টি আমাদের দেশে ব্যতিক্রম। রমজানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অধিক মুনাফা লাভের আশায় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে। রমজান মাসে বাণিজ্যের নামে ব্যক্তি স্বার্থে ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে রমজানকে টার্গেট করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টিতে অপপ্রয়াস চালায়। রমজানে পণ্যের দাম বেড়েছে এমন অভিযোগ যাতে না ওঠে ও সাধারণ ক্রেতারা বুঝতে না পারে, সে জন্য আগে থেকে নিত্যপণ্যের দাম নীরবে পরিকল্পিতভাবে বাড়ানো হয়। যার ফলে শুধু রোজাদার নন, অন্যান্য ধর্মাম্বলীরাও কষ্টে পতিত হন।

এখনই কী কারণে দাম বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। নয়তো পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাবে। অযৌক্তিকভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। খাদ্যে ভেজাল, মজুদদারি, মুনাফাখোরি ও প্রতারণামূলক সব কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। অশ্লীলতা, অপকার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে। রমজান মাসজুড়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রেখে আত্মশুদ্ধি অর্জন ও নৈতিক উন্নত চরিত্র গঠনে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় আসন্ন পবিত্র রমজানের রোজা পালনে সক্ষম হব।

প্রাবন্ধিক ও মুদ্রণ ব্যবস্থাপক

সিলেট

[email protected]

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত