গণপরিবহণে ভাড়া আদায়ে ই-টিকেটিং

ডিভাইস কারসাজির অভিযোগ

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর গণপরিবহণে ভাড়া আদায়ে ই-টিকেটিং পদ্ধতি চালু নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত। এই প্রক্রিয়াটি চালুর শুরু থেকেই যাত্রীরা স্বাগত জানিয়ে আসছে, কারণ এখানে ভাড়া নিয়ে নয়ছয় করার অবকাশ থাকবে না- এমন ধারণা কাজ করেছিল। কিন্তু এই স্বস্তি ক্রমেই ফ্যাকাশে হয়ে আসে। কারণ এরই মধ্যে ডিভাইস কারসাজির অভিযোগ সামনে চলে এসেছে। অর্থাৎ রাজধানীতে গণপরিবহণে নৈরাজ্য ঠেকাতে চালু করা ই-টিকেটিং ডিভাইসে ভাড়া কারসাজি যাত্রীদের বিড়ম্বনা চলমানই রেখেছে। তথ্য অনুযায়ী, একই দূরত্বে একেক কোম্পানির বাসে আদায় করা হচ্ছে একেক রকম ভাড়া। বিআরটিএর বেঁধে দেয়া কিলোমিটার হিসাবে ভাড়ার তালিকার ধারে-কাছেও যাচ্ছেন না পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। শুধু তাই নয়, জানা যায়, সরকারি কোনো ঘোষণা ছাড়াই ডিভাইসের মাধ্যমে মনগড়াভাবে ভাড়া বাড়িয়ে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা। আর এ ডিভাইস কারসাজিতে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। সহযোগী পত্রিকার অনুসন্ধানে এমনই প্রমাণ মেলেছে। উল্লেখ্য, যাত্রীদের হয়রানি ঠেকাতে পরীক্ষামূলকভাবে ই-টিকেটিং চালু করা হয় গত বছরের ১৩ নভেম্বর। প্রথম পর্বে মিরপুর রুটে ৩০টি কোম্পানির ১ হাজার ৬৪৩টি বাসে ই-টিকেটিং চালু করা হয়। দ্বিতীয় পর্বে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৬টি কোম্পানির ৭১৭টি বাসে এবং তৃতীয় পর্বে গত ১ মার্চ থেকে আরও ১৩টি পরিবহণ কোম্পানির ৯৪৭টি বাসে ই-টিকেটিংয়ের আওতায় যাত্রী পরিবহণ করা শুরু হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরই মধ্যে ৭০ ভাগ পরিবহণকে ই-টিকেটিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। তবে এই ব্যবস্থা গণপরিবহণে শৃঙ্খলা কতটা ফেরানো যাবে, তা পর্যালোচনা জরুরি। বিশেষ করে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের যে অপসংস্কৃতি দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে তার থেকে উত্তরণ সম্ভব হয়েছে কি? ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, যাত্রীদের কাছ থেকে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ টাকা করে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। রাজধানীতে যেসব বাস চলাচল করে এগুলো ৩৯ থেকে ৪৫ সিটের। প্রতিটি গাড়িতে সিটের চেয়ে দ্বিগুণ যাত্রী বহন করা হয়। অর্থাৎ গড়ে ৭০-৮০ যাত্রী বহন করা হয়। আর একেকটি গাড়ি প্রতিদিন ৫ থেকে ৬টি ট্রিপ দিয়ে থাকে। গড়ে ৫টি ট্রিপ ধরা হলেও একেকটি গাড়ি ৩৫০ জন যাত্রী বহন করে। যাত্রীদের কাছ থেকে ৫ টাকা করে হলেও ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়তি ভাড়া হাতিয়ে নেয়। এ হিসাবে ই-টিকিটে চলাচলরত ৩ হাজার ৩০৭টি পরিবহণ প্রতিদিন যাত্রীদের কাছ থেকে ৫৭ লাখ ৮৭ হাজার ২৫০ টাকা বাড়তি হাতিয়ে নেয়। এ বাড়তি ভাড়া আদায়ের অঙ্ক মাসে দাঁড়ায় ১৭ কোটি ৩৬ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। এমন একটি হিসাবে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে দুঃখজনক।

ই-টিকেটিংয়ে ভাড়া আদায় একটি উন্নত ও যুগোপযোগী প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে ভাড়া নৈরাজ্য হটিয়ে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু এখানে কীভাবে ফের ভাড়া নৈরাজ্য ঢুকে পড়ল, তা খতিয়ে দেখা দরকার। ই-টিকেটিং ডিভাইসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়টি তদারকি সংস্থা বিআরটিএর অজানা থাকার কথা নয়। এ বিষয়ে তাদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এদিকে টিকিটে অভিযোগ করার নম্বর থাকলেও সেগুলো বন্ধ পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ই-টিকেটিং নিয়ে সব ধরনের অভিযোগ, অপূর্ণতা ও অনিয়ম বন্ধে দায়িত্বশীলরা দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন- এমন প্রত্যাশা সবার।