ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাড়ছে তীব্রতম অপুষ্টির প্রকোপ

শিশুদের প্রতি আরও যত্নশীল হতে হবে
বাড়ছে তীব্রতম অপুষ্টির প্রকোপ

দেশের শিশুদের বৈরি পরিস্থিতির মধ্যেই বেড়ে ওঠতে হয়। সমাজে তাদের ওপর নির্মমতাও কম নয়। আবার শিশুবান্ধব পরিবেশের রয়েছে দারুণ আকাল। এরমধ্যে শিশুর পুষ্টিহীনতা বহুদিনের আলোচনার বিষয়। এই নিয়ে সরকারের ব্যাপক কার্যক্রম রয়েছে, তবে প্রকোপ যথারীতি অব্যাহত রয়েছে। উপরন্তু সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে শিশুদের চূড়ান্ত পর্যায়ের অপুষ্টি তথা তীব্রতম অপুষ্টির (সিভিয়ার অ্যাকিউট ম্যালনিউট্রিশন বা এসএএম) প্রবণতা বাড়ছে। তথ্য অনুযায়ী, বিশেষ করে গত এক বছরে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির এ তীব্রতম মাত্রার প্রকোপ বেড়েছে অনেক বেশি। একই সঙ্গে বেড়েছে এতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যাও। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশের হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা নিতে আসা তীব্রতম অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা বেড়েছে আগের বছরের তুলনায় ৭২ শতাংশেরও বেশি। উল্লেখ্য, কোভিডের কারণে সাধারণ মানুষের অনেকের আয় একেবারে কমে গেছে। জীবিকা নির্বাহে যতটুকু না খেলেই নয়, ততটুকু খেয়ে জীবনধারণ করছে অনেকে। ফলে প্রয়োজনীয় পুষ্টির বিষয়টিতে তারা আপস করতে বাধ্য হচ্ছেন। এরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাভাবিক শিশুদের থেকে তীব্রতম অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর মৃত্যুঝুঁকি ১২ গুণ বেশি। সঙ্গতকারণেই এই এদিকে সবার মনোযোগ আকর্ষণ জরুরি।

আমরা জেনেছি, তীব্রতম অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তবে দেশে মাঝারি অপুষ্টিতে (এমএএম) আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা খুব বেশি। আর এ শিশুদের অপুষ্টির মাত্রা বেড়ে যখন তীব্রতম পর্যায়ে যায় তখন প্রকাশ পায়। মাঝারি তীব্রতার অপুষ্টিতে আক্রান্ত অবস্থায় পরিচর্যা করা গেলে তা আর তীব্রতম পর্যায়ে যেতে পারে না। এই নিয়ে আমরা অনেকেই সচেতন নই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানা কারণে তীব্রতম অপুষ্টি সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন প্রসূতি নারী ও সন্তানের জন্মকালীন পরিচর্যার অভাবে শিশুর মধ্যে অপুষ্টি দেখা যেতে পারে। তবে এর প্রধানতম কারণ হিসেবে দেখা হয় নিয়মিত খাদ্য তালিকায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের অনুপস্থিতিকে। এ অপুষ্টি চূড়ান্ত বা তীব্রতম মাত্রায় পৌঁছলে শিশুর খাবারে অরুচিসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা ও শারীরিক জটিলতাও দেখা দিতে পারে। মূলত ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সি শিশুদের মধ্যে তীব্রতম অপুষ্টি ও তীব্রতম অপুষ্টিজনিত জটিলতা দেখা দিতে পারে। কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা বা শারীরিক জটিলতামুক্ত শিশুর যদি খাবারে রুচি থাকে, তাহলেও সে তীব্রতম অপুষ্টিতে আক্রান্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে এমন শিশুরা সাধারণত রোগা-পাতলা হয়। এছাড়া একেবারে চুপচাপ হয়ে পড়া, দুর্বল হয়ে কান্নার শক্তিও হারিয়ে ফেলা, চামড়া ঝুলে পড়া এবং ঘাড়, বুকের পাঁজর ও শরীরের অন্যান্য হাড় সহজেই দৃশ্যমান হয়ে পড়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

বর্তমানে বিশ্বে মারাত্মক তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ওপরের দিকে। আর অপুষ্টিকে দেখা হয় শিশুর শারীরিক ও মানসিক উন্নতির সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে। তাই আগামী প্রজন্মেও স্বাস্থোজ্জ্বল জীবনের জন্য ব্যক্তি-পরিবার থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যান্ত সচেতনতা জরুরি। তথ্যমতে, ডব্লিউএইচওর গাইডলাইনের ভিত্তিতে বর্তমানে দেশে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এসএএম কর্নার চালু হয়েছে। এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। তবে এ কর্মসূচিতে উপকরণের অভাবসহ নানা সংকটে ভুগছে বলে জানা যায়, তা দূর করা দরকার। এছাড়া তীব্রতম অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর পিতা-মাতার অসচেতনতাও দূর করতে হবে। সরকারকে এই নিয়ে আরও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত