নিত্যপণ্যের দামে অস্বস্তি

নিয়ন্ত্রণের কি কেউ নেই?

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতিবছর রমজান মাস এলেই ছোলা, পেঁয়াজ ও ডালের বাজার অসহনীয় হয়ে ওঠে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। পাশাপাশি অন্য নিত্যপণ্যের দামও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সব মিলে রমজানের আগেই যেন নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন লেগেছে। উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী সপ্তাহ শেষে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। প্রতিবারের মতো এবারও রমজানের আগেই অতি প্রয়োজনীয় বেশ কিছু খাদ্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। এর মধ্যে চাল, ডাল, আটা, পেঁয়াজ, ময়দা, মসলা, ডিম, মুরগি, মাছ ও মাংসের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ব পরিস্থিতির প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা ভোক্তার পকেট কাটছে। অবশ্যই এই নিয়ে ব্যবসায়ীদের আত্মপক্ষ সমর্থনেরও সুযোগ রয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো, প্রতিকারে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারছে না। ফলে বাড়তি দামের বোঝা বইতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। রমজানে কী হবে- সেই চিন্তায় দিশাহারা তারা। অথচ সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্?শি বলেছেন, দেশে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পণ্য মজুত রয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে, রমজান মাসে কোনো পণ্যের ঘাটতি হবে না। ব্যবসায়ী নেতৃত্বও দাম স্বাভাবিক থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বাস্তবে বরাবরের মতোই কেউ কথা রাখেনি।

এদিকে পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে খাদ্যে ভেজাল, মজুতদারি, কালোবাজারি ও নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টাকে অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসবের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, মানুষ যাতে ভালোভাবে তাদের ধর্মকর্ম ও রোজা যথাযথভাবে পালন করতে পারে, সেদিকেই সবার দৃষ্টি দেয়া উচিত। এ সময় এসব মুনাফালোভীর জিনিসের দাম বাড়ানো ও মানুষকে বিপদে ফেলার কোনো মানে হয় না। প্রধানমন্ত্রী যথাযথ মন্তব্যই করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, রোজাকে সামনে রেখে কিছু সুবিধাভোগী অধিক মুনাফার লোভে সব ধরনের অপকর্ম ও কারসাজি চালিয়ে যান। এদের ঔদ্ধত্য এমন চরমে উঠেছে যে শুধু সরকারের পক্ষেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। স্মর্তব্য, সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়েছে। বাজারে চাল, ডাল, চিনি ও সয়াবিন তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম উচ্চমূল্যে এসে থেমে আছে। আর বিশেষ করে রমজানে বেশি কেনা হয়, এমন সব পণ্যের দাম বেড়েছে। বোতলজাত সয়াবিনের দাম প্রতি কেজি ১৯০ টাকার মধ্যে। বাজারভেদে ব্রয়লার মুরগি গত সপ্তাহের মতো ২৪০-২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নিম্নবিত্ত তো বটে, মধ্যবিত্তও গরুর মাংস কিনতে আতঙ্ক বোধ করছে। এদিকে বাজারে অন্যান্য পণ্যের মতো সবধরনের মাছের দাম বাড়তি। বাজারে গরিবের মাছ হিসেবে যে পাঙাশ, তেলাপিয়া পরিচিত সেই মাছেরও অতিরিক্ত দামে ছোঁয়াও যাচ্ছে না। বেশিভাগ সবজির দাম ১০০-২০০ টাকা। ৫০-৬০ টাকার নিচে পেঁপে ছাড়া কিছুই নেই।

সম্প্রতি এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, পরিবারের পক্ষে শিশুদের প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবারের জোগান দিনে না পারায় শিশুদের তীব্রতম অপুষ্টির সংখ্যা বাড়ছে, যা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক জটিলতা তৈরি করছে। সাধারণ ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার কমতির কারণে ভবিষ্যতে এই ধরনের আরও সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ শুধু রমজান, এখন সারা বছরই মানুষ দাম বাড়ার আতঙ্কে থাকে। এ ধরনের অস্বস্তি থেকে মুক্তির পথ বের করতে হবে। এ নিয়ে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ জরুরি। কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন বলেই প্রত্যাশা করা যায়।