ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিস্ফোরণ আতঙ্কে পোশাক শিল্প

মালিকদের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে
বিস্ফোরণ আতঙ্কে পোশাক শিল্প

সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক অগ্নিদুর্ঘটনা কিংবা বিস্ফোরণে জনমনে তো বটেই, কারখানা মালিকদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। উল্লেখ্য, রাজধানীর পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারে ৭ মার্চ এক বহুতল ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাণ হারান অন্তত ২৩ জন এবং আহত হন শতাধিক। গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকে এ বিস্ফোরণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার দু’দিন আগে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণে পাঁচজন নিহত এবং অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছিলেন। এরও একদিন আগে ৪ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণে অন্তত সাতজন নিহত হন। সর্বশেষ শনিবার দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আর বিগত বছরগুলোয় শিল্প-কারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা ও বিস্ফোরণের পরিসংখ্যান এবং চলতি বছরের শুরুর দিকের এসব ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন পোশাক শিল্প মালিকরা- পত্রিকান্তরে এমন আভাস পাওয়া গেছে। এর যথাযথ কার্যকারণও রয়েছে। স্মর্তব্য, বিগত বছরগুলোর মতোই চলতি বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্নিদুর্ঘটনা ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন উৎপাদনমুখী শিল্প-কারখানায়। এর মধ্যে ৩ মার্চ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে কারখানাগুলোকে সতর্ক করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। এয়ারকন্ডিশনার ও গ্যাসলাইনে বিস্ফোরণ রোধে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয় পোশাক মালিকদের।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, তৈরি পোশাক শিল্প-কারখানাগুলোয় প্রতি বছর ক্রমেই বাড়ছে অগ্নিদুর্ঘটনা। একই সঙ্গে বড় হচ্ছে আর্থিক ক্ষতির অঙ্কটাও। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২২ সালে শুধু তৈরি পোশাক কারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৮৪টি। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী কারখানায় ২৪১ ও স্থানীয় কারখানায় ১৪৩ বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। দেশে ২০২১ সালে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে ২৭৫টি। রপ্তানিমুখী কারখানায় ১৮০ ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পোশাক কারখানায় ৯৫ বার আগুন লাগে। তার আগের বছর ২০২০ সালে তৈরি পোশাক কারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে ২৭৩টি। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী কারখানায় ১৭৭ ও স্থানীয় কারখানায় ৯৬ বার অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় পোশাক শিল্প-কারখানায় সতর্কতামূলক দিকনির্দেশনা দিয়ে বিজিএমইএর বিজ্ঞপ্তি দেয়া যথাযথ হয়েছে বলা যায়। আর শুধু তৈরি পোশাক শিল্প-কারখানা নয়, অন্যান্য কারখানায়ও গত ৩ বছরে ধারাবাহিকভাবে অগ্নিদুর্ঘটনা বেড়েছে। দেশের অগ্নিনির্বাপণ সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালে এসব কারখানায় ৩৮৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকারও বেশি। ২০২২ সালে বেড়ে ৪২৯টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয় ২২ কোটি ৯৮ লাখ ১২ হাজার টাকার। ২০২১ সালে ২০ কোটি ২৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে ৩৮২টি অগ্নিদুর্ঘটনায়। অন্যদিকে গত ৩ বছরে বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনাও বেড়েছে। সংগত কারণেই সব ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানকেই এই সময়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

আমাদের রপ্তানি আয়ের বড় অংশই পোশাক খাত থেকে অর্জিত হয়। সংগত কারণেই এখানে কর্র্মপরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে অগ্নিদুর্ঘটনা নিরোধ ব্যবস্থা টেকসই হওয়া দরকার। এর ব্যত্যয় ঘটলে রপ্তারিকারকদের মধ্যে বিরূপ মনোভঙ্গি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, যা ডলার সংকটের এ মুহূর্তে জটিল প্রভাব ফেলবে। এসব কারণেই এই নিয়ে সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন। আর শুধু পোশাক কারখানা নয়, সব জায়গাতেই অগ্নিদুর্ঘটনার বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত