ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিষাক্ত বায়ুতে ভুগছে শিশুরা

যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া দরকার
বিষাক্ত বায়ুতে ভুগছে শিশুরা

সাম্প্রতিককালে ঢাকার বায়ুদূষণ বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের তথ্যমতে, ঢাকা বিশ্বের দূষিত নগরগুলোর একটি। প্রায়ই এটি তালিকার শীর্ষে থাকে। গত ১৬ মার্চ সকাল সোয়া ৯টায় বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের তথ্য বলছে, ঢাকার বাতাসের মানে বেশ অবনতি হয়েছে। মানে অস্বাস্থ্যকর। আর এই দূষিত বায়ুতে হাঁচি-কাশি, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে হতে পারে ফুসফুসের ক্যান্সার। এ ছাড়া কিডনি ও হৃদরোগের কারণও হতে পারে বায়ুদূষণ। পাশাপাশি আতঙ্কের খবর ঢাকায় বিষাক্ত বায়ুতে শিশুরা চরম ভুক্তভোগীতে পরিণত হয়েছে। লক্ষণীয়, ঢাকায় চারদিকে ধূলিকণা ভাসছে কুয়াশার মতো। বাতাসের বিষে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। গর্ভে পূর্ণ সময় থাকার আগেই শিশু জন্মানোরও একটি কারণ বায়ুদূষণ। এ দূষণের শিকার মায়েদের কম ওজনের শিশু জন্ম দেয়ার হার বেশি বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। বায়ুদূষণজনিত রোগে দেশে কত সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত, তার কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, বায়ুদূষণজনিত রোগ বাড়ছে। আর এ ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকির শিকার গর্ভবতী মা ও শিশুরা। অটিস্টিক শিশুর জন্ম হওয়ার একটি কারণ দূষিত বায়ু। বায়ুদূষণের কারণে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়।

ঢাকায় সন্তানসম্ভবা মায়েদের ওপর বায়ুদূষণের বিরূপ প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি’) গবেষকরা। সেখাসে জন্ম নেয়া ৩ হাজার ২০৬ নবজাতককে নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় বেশি বায়ুদূষণের শিকার মায়েদের মধ্যে কম ওজনের শিশু জন্ম দেয়ার হার বেশি। অকালে সন্তান জন্মদানের ঝুঁকিও তাদের মধ্যে বেশি। এদিকে বৈশ্বিক বায়ুদূষণের ঝুঁকিবিষয়ক ‘দ্য স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের যে পাঁচটি দেশের শতভাগ মানুষ দূষিত বায়ুর মধ্যে বসবাস করে, তার একটি বাংলাদেশ। বায়ুদূষণজনিত মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ পঞ্চম। আর বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন বয়স্ক মানুষ, শিশু এবং যাদের ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ আছে তারা। উল্লেখ্য, গবেষণা বলছে, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ হচ্ছে অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজের মাধ্যমে। বায়ুদূষণের জন্য নির্মাণ খাত ৩০ শতাংশ দায়ী। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ হচ্ছে ইটভাটা ও শিল্প-কারখানার মাধ্যমে। যার হার ২৯ শতাংশ। বায়ুদূষণের তৃতীয় সর্বোচ্চ কারণ হলো যানবাহনের কালো ধোঁয়া, যার শতকরা হার ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ মনুষ্য-সৃষ্ট অনাসৃষ্টি দূষণের প্রধান কারণ। আর এ দূষণে ব্যাপক হার আক্রান্ত হচ্ছে আগামীদিনের নাগরিক- শিশুরা। এর বিরূপ প্রভাব সুদূরপ্রসারী হওয়া স্বাভাবিক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বায়দূষণ পুরোপুরি দূর করা যাবে না। তবে বেশি দূষণের এলাকায় মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। সেটা কতটুকু করা হয়েছে তা দেখার বিষয়। আমরা উন্নয়নের কথা বলছি, অথচ পরিবেশসম্মত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ব্যত্যয় ঘটায় তা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। অর্থ মানবসম্পদ উন্নয়নের বিষয়টি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটি কিছুতেই প্রত্যাশিত নয়। বায়ুদূষণসহ অন্যান্য দূষণে আক্রান্ত হয়ে শিশুরা শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তি নিয়ে বড় হচ্ছে। এই রকম অবস্থার অবসান হওয়া জরুরি। এই নিয়ে সরকার তো বটে, নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত