ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বেড়েই চলছে সড়ক দুর্ঘটনা

নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিন
বেড়েই চলছে সড়ক দুর্ঘটনা

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে, নিয়মিত হতাহতের ঘটনা ঘটছে। তবে বড় দুর্ঘটনাগুলোই আলোচনায় আসছে, ছোটখাটো দুর্ঘটনা, এমনকি হতাহতের ঘটনা অনেকটা গা-সওয়া হয়ে গেছে। তবে বাস্তবতা হলো, মহাসড়কে কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না দুর্ঘটনা। এ অবস্থায় রোববার একদিনেই এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় ইমাদ পরিবহণ দুর্ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যুর পর মহাসড়কে দ্রুতগতির যান নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি ফের আলোচনায় উঠে আসে। উল্লেখ্য, দুর্ঘটনাটি ঘটে মাদারীপুরের শিবচরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়েতে। এর পর জানা গেল, দুর্ঘটনায় পড়া বাসটির চালক সর্বশেষ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ ঘণ্টার বেশি বাস চালিয়ে ক্লান্ত ছিলেন। বাসটি চালানোর অনুমোদন ছিল না, ফিটনেস সনদের মেয়াদও পেরিয়ে গেছে। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপ চাপায় একসঙ্গে ছয় ভাই নিহত হওয়ার পর বেরিয়ে আসে যে, পিকআপটির অনুমোদন সংক্রান্ত হালনাগাদ কোনো কাগজপত্র ছিল না। চালকেরও লাইসেন্স ছিল না। এভাবে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, হয় সংশ্লিষ্ট বাহনের চলাচলের অনুমোদন বা রুট পারমিট নেই, নয়তো ফিটনেস সনদ নেই। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। অর্থাৎ অনিয়ম আর বিশৃঙ্খলা সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। সড়কে চলছে রীতিমতো নৈরাজ্য।

পর্যবেক্ষণে বলা যায়, সড়কে নৈরাজ্য চলছে বহু বছর ধরে। বলা যায়, প্রতিশ্রুতি ও প্রত্যাশা জাগিয়েও সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় নৈরাজ্য দূর করার ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। মন্ত্রণালয়টি শুধু এ ক্ষেত্রেই নয়, বাস ও অটোরিকশায় নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর করা, অধীন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সেবা সহজ করা ও দুর্নীতি কমানো, সড়কের মান উন্নত করা এবং সময়মতো ও নির্ধারিত ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা- এসব ক্ষেত্রেও সাফল্য দেখিয়েছে এমন দাবি করা যাবে না। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, দেশে ভাড়া নিয়ে বচসার কারণে যাত্রীকে মার খেতে হচ্ছে, বাসচাপায় মরতে হচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশের সড়ক পরিবহণ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের পর বছর এই খাতে বেশ কয়েকটি সমস্যা বিরাজমান থাকায় একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। আইন হলেও তার শক্ত প্রয়োগ না থাকায় বাস্তব পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে অব্যাহত গতিতে দুর্ঘটনা চলছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সারা দেশে ৬ হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায়, ৯ হাজার ৯৫১ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ১২ হাজারের বেশি মানুষ। আর সড়ক পরিবহণ নিয়ে কাজ করে, এমন সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বছরের প্রথম ৩ মাসেই সারা দেশে অন্তত এক হাজার সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে, যার বড় একটি অংশ হয়েছে বাস, ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যানগুলোর কারণে।

হাইওয়ে পুলিশের বরাতে প্রকাশ, অতিরিক্ত গতির বাহনগুলোকে মামলা দিয়েও দমানো যাচ্ছে না। এটা অসচেতনতা ও অসক্ষমতার বহিঃপ্রকাশই বটে। এই অবস্থায় সড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এদিকে পদ্মা সেতু চালুর পর প্রায় সব সড়কেই যানবাহন চলাচল তিন থেকে পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেলেও সে অনুপাতে বাড়েনি জনবলসহ অন্যান্য সাপোর্ট। এ অবস্থার সমাধান জরুরি। এখানে সুশাসনের ঘাটতিও দৃশ্যমান। গণপরিবহণকে নিরাপদ করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে পুনরায় প্রত্যাশা করা গেল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত