স্বাগত মাহে রমজান

ত্যাগ ও সংযম শিক্ষার মাস

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

অবারিত রহমত, বরকত ও অফুরান কল্যাণ-সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে পুণ্য বৈভবে এলো মাহে রমজান। রমজান ত্যাগ ও সংযমের মাস। সহমর্মিতা ও সহযোগিতার আলো ছড়ানোর মাস। অমূল্য রতন তাকওয়া অর্জনের মাস এবং আল্লাহপ্রেমে পরিপূর্ণ নিমজ্জিত হওয়ার মাস। ক্ষমা-মার্জনা ও অনুকম্পায় সিক্ত হওয়ার মাস। উম্মতে মুহাম্মদির জন্য অপরিসীম প্রতিদান লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত ও নেক আমলের মৌসুম রমজান মাস। রমজানের পুরো মাস সিয়াম পালন করা ইসলামের পাঁচটি মৌলিক বিষয়ের একটি। আল্লাহর নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় হিজরত করে যাওয়ার দ্বিতীয় বছরে রমজানের সিয়াম পালনের বিধান নিয়ে নাজিল হয় কোরআন মজিদের সুরা বাকারার-১৮৩ নম্বর আয়াতটি। ঘোষণা করা হয়, হে মোমিনরা, তোমাদের প্রতি সিয়াম পালন আবশ্যিক করা হলো, যেমন তা আবশ্যিক করা হয়েছিল তোমাদের আগে যারা ছিল তাদের প্রতি, যাতে তোমরা মোত্তাকি হতে পারো। আমরা পুণ্যময় রমজানের এই আগমনকে আহলান সাহলান বা স্বাগত জানাই। আর এই মাহেন্দ্রক্ষণে আলোকিত বাংলাদেশের পাঠক, লেখক, শুভানুধ্যায়ীদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।

গত কয়েকটি রমজান আমাদের উদ্বেগের মধ্যে কাটাতে হয়েছে। কারণ করোনাভাইরাসের কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো পৃথিবীতে নেমে এসেছিল মহাদুর্যোগ। আল্লাহর রহমতে এবার আমরা করোনার মহাদুর্যোগের ঘনঘটা থেকে মুক্ত হয়েছি। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভয়াবহতা বিশ্বব্যাপী আরেক দুর্যোগ তৈরি করেছে। পরপর এই দুটি বড় ঘটনা পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে অনেক, বদলেছে আমাদের যাপনচর্চা। আল্লাহর অশেষ করুণায় আমরা বিরাজমান দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা পাব- এই প্রার্থনা মাহে রমজানে। এ পবিত্র মাসের তাৎপর্য সুদূরপ্রসারী। এটি মুসলমানদের শিক্ষার মাসও। রমজান শিক্ষা দেয় ত্যাগের, মিতব্যয়িতার, অপরের জন্য নিজকে বিলিয়ে দেয়ার আদর্শ। শেখায় বিত্তবৈভবের গরিমার বদলে স্রষ্টার দরবারে আনুগত্য প্রকাশের মহিমা। দেখিয়ে দেয় সারাদিন পানাহারসহ সব উপভোগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ইবাদতের মধ্যে মগ্ন থাকার সৌন্দর্য। শুধু ব্যক্তিগত ত্যাগ ও সংযম নয়, রমজানের অবশ্য কর্তব্যগুলো পালনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য মুসলমানের সঙ্গে যে যোগসূত্র নবায়ন করে নেয়, তার সামষ্টিক তাৎপর্যও ব্যাপক। পরিতাপের বিষয়, রমজানের ত্যাগ ও সংযমের এই শিক্ষা অনেকের জীবনেই প্রতিভাত হয় না। ত্যাগের বদলে ভোগ, কৃচ্ছ্রের বদলে অপচয়, পরিমিত আহারের বদলে ভূরিভোজ, মিতব্যয়িতার বদলে অপব্যয়িতার দেখানেপনা রজমানের সৌন্দর্যকে মøান করে দেয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহনশীলতা ও সৌহার্দ্যরে বদলে অসহিষ্ণু প্রবণতাও দেখা যায়। রমজান মাস এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যায়। অতি মুনাফালোভীরা রমজান মাসকেই বেছে নেয় মাত্রাতিরিক্ত লাভের উপায় হিসাবে। এই ধরনের মানসিকতার অবসান হওয়া জরুরি। এজন্য দরকার মাহে রমজানের তাৎপর্য গভীরভাবে অনুধাবন।

এবার এমন এক সময়ে রমজান শুরু হয়েছে, যখন বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা বিরাজ করছে। করোনা ও যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া মানুষকে করেছে বিপর্যস্ত। বাংলাদেশেরও বেশির ভাগ মানুষ আর্থিক দুরবস্থায় এক অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে। এ অবস্থায় একে অপরের প্রতি সমব্যথী হতে হবে। ক্ষুধার্ত ও বঞ্চিত মানুষের কষ্ট আমাদের অনুভব করতে হবে। অন্যের কল্যাণার্থে নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে। সব অহং দূরীভূত করতে হবে। আর রমজান আমাদের এসব শিক্ষাই দেয়। আমাদের প্রত্যাশা, এই মাস তাদের জীবন-জীবিকা ত্যাগ ও সংযমের আলোয় উদ্ভাসিত করবে। ব্যক্তিগত সেই আলো আলোকিত করবে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনকেও। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিকভাবে রমজানের রোজা পালন করার তৌফিক দিন।