আত্মহত্যা এক মহাব্যাধি

মিসবাহুল ইসলাম

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আত্মঘাতী বা আত্মহত্যার এই মন্দা শব্দ এখন যেন প্রায় শোনা যায়। আজকাল মানুষের আবেগ আর রাগ এই দুটি যেন বরাবর এক সুতোয় বাধা। অথচ রাগের বশীভূত হয়ে কোনো ক্ষতি করা বা দুর্ঘটনা তৈরি করা এটা মানতে দ্বিধা ছিল না। কিন্তু মানুষের আবেগও যেন সেই পথে হাঁটতে শুরু করেছে। যদিও আবেগ ছাড়াও নানা কারণ আত্মহত্যার সঙ্গে রয়েছে। বহির্বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে আত্মহত্যা রোগীদের সংখ্যা নেই বললেই চলে। কিন্তু দিন পার করতে না করতেই এই সংখ্যা যেন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণী আর যুবক-যুবতীদের প্রেম ভালোবাসা আর দাম্পত্য জীবনের কলহের কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। কে বা কারা এর জন্য দায়ী? প্রশ্নটাই এখানে। প্রথমত, আত্মঘাতী ব্যক্তি সে নিজে দায়ী। এরপর তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহপাঠী থেকে শুরু করে আমরা সবাই এর জন্য দায়ী। আমাদের জনসচেতনতার অভাব এবং নজরদারির কমতির কারণে প্রতিনিয়ত এই করুণ চিত্র দেখতে হচ্ছে কারণ আত্মহত্যাভোগীর এই জঘন্য সিদ্ধান্ত এবং পথ আমাদের কারও? না কারও জন্যই বেছে নিতে হয়েছে। মনোবিজ্ঞানী বিশ্লেষকরা বলেন, নানা কারণে হতে পারে এই আত্মহত্যা। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক অবস্থান আত্মহত্যার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বাড়িয়ে দেয়। যেমন : হতাশা তৈরি হওয়া, জীবনের স্বাদ-আনন্দ হারিয়ে ফেলা, বিষণ্ণতা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা কমে যাওয়া, আবেগ নিরাময়ের দুর্বল ভূমিকা, হিরোইন, কোকেন এবং এলকোহোল ইত্যাদি পদার্থের অপব্যবহারের কারণে মানুসিক ব্যাধি এই আত্মহত্যার জন্য দায়ী । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকায় ৮০ বছরের বেশি বয়সি পুরূষদের মধ্যে এ সংখ্যা বেশি। যদিও যুবক যুবতীরা প্রায়ই এই জঘন্য কাজের চেষ্টা করে। কিন্তু বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের সংখ্যা বেশি। কিশোর-কিশোরীদের মৃত্যুর সর্বোচ্চ দ্বিতীয় কারণ এটি। অল্প বয়সি মেয়েদের প্রায় ৩০ শতাংশ হয়ে থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৩৯ দশমিক ছয়জন পুরুষ-নারী আত্মহত্যা করে। বিশ্বের প্রায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ প্রতিবছর আত্মহত্যার শিকার হয়। অর্থাৎ প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ সেকেন্ডে একজন পুরুষ-নারী আত্মহত্যা করে। নানা কারণ থাকলেও নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং সমীক্ষায় দেখা গেছে মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে ৮৭ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ আত্মহত্যা সংগঠিত হয় । তাছাড়া আত্মহত্যাজনিত ঝুঁকির মধ্যে অন্যান্য বিষয়াদিও আন্তঃসম্পৃক্ত। আত্মহত্যার এই ঝুঁকি কমাতে প্রথমেই আমাদের দেখতে হবে কোন পদ্ধতিতে তারা এই পথে হাঁটে। যেমন : গলায় রশি ঝুলানো, রেলপথ বা স্টেশন এবং ব্রিজের রাস্তাগুলোতে সাধারণত এই ঘটনা আমরা দেখতে পাই । তাই এগুলোর বেষ্টনী জরুরি নিরাপত্তা প্রয়োজন। যখন কেউ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবারের কারও না কারও তা জানা থাকতে পারে বা সন্দেহ মনে হলে তাৎক্ষণিক এই মন্দা মানসিকতা দূর করার জন্য যথাব্যবস্থা প্রয়োজন। উন্নত দেশগুলোতে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চরম মুহূর্তজনিত হটলাইন দেয়া থাকে, যেখানে তার চিন্তা এবং আত্মহত্যার কথা জানান দিয়ে নিজের সমস্যা সমাধান সম্পর্কে অবহিত হয়ে এই জঘন্য মন্দা কাজ থেকে বেঁচে আসে পারে। এ পদ্ধতি বাংলাদেশেও চালু হতে পারে। আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া মানুষ সাধারণত এমন হয় যাদের ডিপ্রেশন বেশি থাকে। চিকিৎসকদের মতে এটি এমন একটি ব্যাধি যেই রোগ সবার অজান্তে জীবনের সম্মানবোধ এবং মায়াকে হারিয়ে তিলে তিলে নিজের জীবন নষ্ট করে দেয়। কিন্তু ভয়ের বিষয় হলো, ডিপ্রেশন এই রোগ এবং তার প্রতিকার সম্পর্কে আমরা প্রায় উদাসীন। অথচ বিশ্বা স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ এই ডিপ্রেশন রোগে আক্রান্ত। সমীক্ষায় আরও জানা গেছে, প্রতি পাঁচজনের একজন এ রোগে ভুগছেন। জরিপে আরও দেখা গেছে, বাংলাদেশের শতকরা ১৮ থেকে ২০ ভাগ মানুষ এই ডিপ্রেশনজনিত রোগে ভুগছেন। তাই আত্মহত্যাজনিত এ জঘন্য অপরাধ বোধ প্রচার এবং জোরালো পদক্ষেপ প্রতিরোধ অত্যন্ত প্রয়োজন। জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং ভুক্তভোগীর এই সমস্যা নিরসনে আমাদের সবার এগিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি।

শিক্ষার্থী

দারুল হেদায়া ইসলামিক

ইনস্টিটিউট বারিধারা, ঢাকা

[email protected]