ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সমস্যায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী

তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে
সমস্যায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী

করোনাকালের ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে ব্যবসায়ীদের রাশিয়ান-ইউক্রেন যুদ্ধের বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হয়। বিবিধ সমস্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দুরুহ হলে তাদের পাশে সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। তবে পরিতাপের বিষয় হলো, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর এসব সুবিধা তেমন পায়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ। আমরা জানি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ক্রেতার সম্পর্ক একটু অন্যরকম। এখানে বাকিতে পণ্য বিক্রির রেওয়াজ রয়েছে, আর করোনাকালে বাকিতে পণ্য বিক্রি করে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিপুল পরিমাণ পুঁজি হারান। এই অবস্থায় কেউ এনজিও বা কারও কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ব্যাপক হারে বেড়ে যায় জিনিসপত্রের দাম। ব্যবসায় টিকে থাকতে বাড়তি পুঁজির প্রয়োজন দেখা দেয়। ক্রেতাদের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায় করতে না পেরে আবার ঋণ করেন। এ অবস্থায় ব্যবসা ধরে রাখা এবং সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। মোটামুটি সারা দেশে অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীর অবস্থা এখন এমনই। সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি পুঁজির প্রয়োজনে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই। কেউ কেউ দ্বারস্থ হচ্ছেন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। এক ঋণ শোধ করতে নিতে হচ্ছে নতুন ঋণ। এভাবে দেশের প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা ঋণচক্রে জড়িয়ে পড়ছেন।

তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা পুনরুদ্ধারে সরকার বড় অঙ্কের আর্থিক প্রণোদনা দিলেও সাধারণ ব্যবসায়ীরা সে সুবিধা পাননি। সরকারের সহযোগিতায় বড় কোম্পানিগুলো টিকে থাকতে পারলেও ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ব্যবসায় টিকতে পারছেন না। পুঁজির অভাব, লোকসান, ব্যাংক ঋণ ও সমবায় ঋণের কারণে অনেককে ব্যবসা থেকেও সরে দাঁড়াতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, করোনা ও পরবর্তী সময়ে যুদ্ধের কারণে দেশের ৩৩ ভাগ সাধারণ ব্যবসায়ী তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। বাকিরা টিকে থাকার সংগ্রাম করছেন। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ বাড়াতে হচ্ছে। এ জন্য কমপক্ষে ৭০ ভাগ ব্যবসায়ী কোনো না কোনোভাবে ঋণ নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সামনে ঈদ। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ধারদেনা করে মালপত্র তুলছেন। এই সময়ে যদি বেচা-বিক্রি না বাড়ে এবং লোকসান কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না হয়, তাহলে আরও অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হবেন, যা বেকারের সংখ্যাই বাড়িয়ে তুলবে। সূত্রমতে, দেশে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৬ লাখ ৭৬৩টি। এর মধ্যে বিভিন্ন মার্কেট ও পাড়া-মহল্লা মিলিয়ে ঢাকা শহরে দোকানের সংখ্যা সাড়ে ৫ লাখের মতো। মালিক ও কর্মচারী মিলিয়ে সারা দেশে এ খাতে কাজ করেন প্রায় ৩ কোটি মানুষ। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানে সারা দিনে বিক্রি নেই- এমন অনেক দোকান রয়েছে। ফলে মাসের খরচ ও ভাড়ার টাকা দিতে পারছেন না অনেকে।

দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ভালো নেই, একইভাবে ভালো নেই সাধারণ ক্রেতারা। সরকার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে, অথচ এর কোনো সুবিধা সাধারণ দোকান মালিক কিংবা ক্রেতা পায়নি বলে প্রতীয়মান। সরকারের সহযোগিতায় বড় কোম্পানিগুলো টিকে থাকতে পারলেও ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ব্যবসায় টিকতে পারছেন না। এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষ উপলব্ধি করছে কি-না আমাদের জানা নেই। তবে এদিকে মনোযোগ দেয়া দরকার। কারণ এর সঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুুষের রুজি-রোজগার জড়িত। এ পরিস্থিতিতে সরকারের নীতি সহায়তার খুব প্রয়োজন। আগামী বাজেটে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ সুবিধা থাকা দরকার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত