মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবিচল বাংলাদেশ

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আজ আমাদের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালির শৃঙ্খল মুক্তির দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বান ও নেতৃত্বে বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম শুরু হয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লাখো শহীদের আত্মদানের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। স্বভাবতই বাঙালির মুক্তির চূড়ান্ত লড়াইয়ের সূচনাকারী ২৬ মার্চ সোনার অক্ষরে লেখা একটি দিন। ইতিহাসের পাতায় মুক্তিসংগ্রামের পথ ধরে এদিন সূচিত হয়েছিল রক্তে রাঙানো আত্মত্যাগের অতুলনীয় নজির। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের প্রত্যাশিত স্বাধীনতা। মুক্তিকামী বাঙালির সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ বাস্তবিক অর্থেই সব নিপীড়িত ও নিগৃহীত জনগোষ্ঠীর অমূল্য অনুপ্রেরণা। একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এরই মধ্যে বিশ্ব স্বীকৃতি আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে সব লড়াকু নেতৃত্ব ও সৈনিককে আমাদের অভিবাদন। আমরা সশ্রদ্ধচিত্তে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করছি।

এটা সবার জানা, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ-ভারতীয় উপনিবেশের অবসানের ফলে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশ তখন পূর্ব-পাকিস্তান নামে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু নতুন রাষ্ট্র কাঠামোয় বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটল না, বরং নয়া উপনিবেশবাদের খড়গ নেমে এলো এ অঞ্চলের মানুষের ওপর। বাঙালির ভাষা, পরিচিতি ও অর্থনীতির ওপর আঘাত হানা হলো। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহনা করতে থাকে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সারা দেশে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। বীর বাঙালি তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এর আগে ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে উত্তাল জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ঘোষণা দিয়ে জাতিকে স্বাধীনতার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ করেন।

স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মর্যাদাশীল একটি দেশ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এ দেশের মানুষকে নানা স্তরে প্রেরণা জুগিয়ে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রধানতম ভিত্তি ছিল অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যবোধ। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, অর্থনৈতিক সূচকে আমরা এগিয়ে চলেছি। বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার, রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স, গড় আয়ু এবং শিশুমৃত্যুর হারের সূচক ইতিবাচক। বিশ্বের স্বীকৃত সব সংস্থাই বাংলাদেশকে উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে গণ্য করছে। নানা বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও জনস্পৃহার কারণে অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের অনেক অর্জন এখন বিশ্ব সম্প্রদায়ের সম্পদে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে বাঙালির ভাষা দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ পেয়েছে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি। বাংলাদেশ বর্তমানে ২০৪১ সালে একটি উন্নত দেশে উপনীত হওয়ার রূপকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত। বাংলাদেশের সরকার এবং জনস্পৃহা সেদিকেই ধাবমান। আজ আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ও সংহতি। রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সুশাসনকে আরও দৃঢ়ভূত করা। আমাদের লক্ষ্য হোক কল্যাণকর রাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের আগামী আরও সমৃদ্ধ হবে এ প্রত্যয়ে আমাদের অবিচল থাকতে হবে।