দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কবলে সাধারণ মানুষ

বর্তমানে নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর আকাশস্পর্শী মূল্য সাধারণ মানুষকে সাংঘাতিক হতাশার গণ্ডিতে আবদ্ধ করে রেখেছে। বিশেষভাবে বলতে গেলে খাদ্যমূল্যের কথাটাই যেন সবকিছুর আগে আসে। এ সময়ে পর্যাপ্ত অর্থহীনতায় ভুগছে সাধারণ মানুষ। ফলস্বরূপ প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সামনে থাকলেও পকেটের দিকে তাকিয়ে শুধু দেখে যেতে হচ্ছে বাজারের সারিবদ্ধ দোকানগুলোর দিকে। আজকের দিনে দেশের বহুমুখী উন্নয়ন হলেও এদেশের বহুসংখ্যক মানুষই অপর্যাপ্ত আয়ের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষের। এসব মানুষের দুর্দিন ক্রমশই ঘনিয়ে আসছে নিত্যদিনের অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য ভারসাম্যহীনতার কারণে। এসব জিনিসপত্রের অস্থিতিশীলতা সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষের কাছে বাধাহীন মনে হলেও নিম্নআয়ের মানুষের কাছে একেবারে বিপরীত।

উপস্থিত সময়ে অশিষ্ট চেতনার মলাটে অবরুদ্ধ হয়ে উঠেছে সমাজের কিছু অসাধু লোক। সভ্যতা হারিয়ে বর্বররূপে চেপে বসছে একশ্রেণি আরেক শ্রেণির ওপর। বর্তমান পণ্যসামগ্রীর বাজার মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কিছু সুযোগ সন্ধানি ব্যবসায়ী যেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইচ্ছেমতো দাম চেয়ে বসছে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে। দিনে দিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্নতার শিকার। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের। রমজান উপলক্ষ্যে মানুষ ঘরে প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রীর জোগান দিতেও ব্যর্থ। এদেশের ৭৮.৬ শতাংশ মানুষই গ্রামে বাস করছে, বাকি ২১.৪ শতাংশ শহুরে জীবনযাপন করছে। দেশের সিংহভাগই নিম্নমানের জীবনযাপন করছে। কেননা, গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থা শহরের তুলনায় অতিমাত্রায় অনুন্নত। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই কৃষিকাজ, গো-পালন, কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসা করে প্রতিদিনের দুমুঠো ভাত জোগায়। এমতাবস্থায়, দ্রব্যমূল্যের যে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত বৃদ্ধি তাতে এসব মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। নিত্যপণ্যের এ লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে গ্রামীণ জীবনে তিনবেলা ভাত জোগান দেয়াটাই যেন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে এখন।

বর্তমানে যে শুধু খাদ্যদ্রব্যের দাম আকাশছোঁয়া এরকমটা নয়। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদার কয়েকটি ক্ষেত্রেই এখন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে। বর্তমান শিক্ষার কথা বলতে গেলে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুবাদে খাতা এবং বই হলো অবশ্য প্রয়োজনীয় বস্তু; কিন্তু পৃষ্ঠার লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাতার জোগান দিতে অক্ষম নিম্নআয়ের অভিভাবকরা। কাজেই শিক্ষার্থীরা অনিশ্চিত মনোবল নিয়ে লেখাপড়ার ধাপে এগোচ্ছে যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি মারাত্মক ক্ষতির পরিচয়। পৃষ্ঠার এমন চড়া দামের খপ্পরে পড়ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে যারা বাইরে অর্থাৎ বাড়ি ছেড়ে দেশের আনাচে-কানাচে পড়াশোনায় নিয়োজিত তাদের অবস্থাটা মর্মান্তিক। খাতাপত্রের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্যেমূল্যের যে লাগামহীন বিস্তার এ নিয়ে বেশ বিভৎস রকমের বিপাকে পড়ছে এসব শিক্ষার্থীরা। আগে হাতখরচের জন্য কিছু টাকা জীবিত থাকত মাস শেষে। কিন্তু এখনকার সময়ে যারা মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত তারা বাড়িতে বাড়তি কোনো টাকা চাওয়ার সুযোগও পাচ্ছে না।

নিম্ন আয়ের মানুষের এই নিঃশব্দ হাহাকার কে শুনবে, দেখবে কে তাদের এ রংহীনতা? বেঁচে থাকাটাই যেন দুষ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে সামনের পথে এগোতে গেলেই। যেসব পরিবারে মাত্র একজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বিদ্যমান, সে ব্যক্তির পক্ষে আদৌ কি সম্ভব নিত্যদিনের এই পণ্য মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা?

জীবনের নির্মম অবস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এসব মানুষকে প্রতিনিয়ত। এ অবস্থা চলমান থাকলে দেশের সাধারণ মানুষ হতাশ আর অসহায়ত্বের কিনারায় ডুবে মরবে। সাধারণ মানুষ মানসিকভাবেও নির্যাতিত হচ্ছে। দেশের এরূপ পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রিকর মূল্যকে অবশ্যই সর্বস্তরের মানুষের সক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত করাটা আবশ্যক। দ্রব্যমূল্যের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করাটাই বর্তমানের এ সমস্যার সঠিক উপয়ান্তর হবে।