ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বেপরোয়া মোটরবাইক

নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিন
বেপরোয়া মোটরবাইক

ঢাকার তীব্র যানজটের ফেরে বর্তমানে মোটরসাইকেলের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। মোটরসাইকেলে ব্যক্তিগত কাজের পাশাপাশি অনেকে রাইড শেয়ারিং করছেন। বেকারদের কেউ কেউ এটিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ঢাকায় মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার করে জীবিকা-নির্বাহ করছেন লাখো মানুষ। তাই দিন দিন মোটরসাইকেলের চাহিদা বাড়ছে। বিআরটিএর তথ্য বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৪০ লাখ ৬৮ হাজার ৮১৯টি। এর মধ্যে শুধু ঢাকায় নিবন্ধন হয়েছে ১০ লাখ ৩০ হাজার ৬৪৭টি। তবে মোটরসাইকেলের গতির নেশা বাড়াচ্ছে বিপদ। নতুন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে বেপরোয়া মোটরবাইক। নিয়ন্ত্রণহীন এই চালকদের উচ্চ শব্দে ছুটে চলার ঘটনা নিত্যদিনের। এতে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। গত কয়েক বছর রাইড শেয়ারিং চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিনিয়তই রাস্তায় নামছে অসংখ্য মোটরসাইকেল। বেপরোয়া গতি, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা, রাস্তার মোড়ে মোড়ে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে সড়কে তৈরি করছে বিশৃঙ্খলা ও যানজট। এমনকি ব্যস্ত সড়কে ফুটপাথের ওপর মোটরসাইকেল তুলে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। প্রায়ই দেখা যায়, ট্রাফিকের কোনো সংকেত ছাড়াই চলন্ত গাড়ির ভেতর দিয়ে একেবেঁকে চলে মোটরসাইকেল। এভাবে সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরির অন্যতম বাহন মোটরসাইকেল।

মোটরবাইকের এ জনপ্রিয়তা এবং বেপরোয়া চলাচলের পেছনে রয়েছে মূলত ট্রাফিক ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা। আমাদের গণপরিবহণ ব্যবস্থা এমন ছাঁচে গড়ে উঠেছে যে, সেখানে যাত্রী ও পথচারীদের গৌণ হিসেবে দেখার প্রবণতা রয়েছে। তাদের সুবিধার প্রতি কম নজর রাখার হয়। যানজটে নাকাল হয় যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় কেটে যায়। জরুরি কোনো কাজ এখানে সময়মতো করার উপায় নেই। এ অবস্থায় যাত্রীরা রাইড শেয়ারিং করে, আবার কেউবা নিজেরাই মোটরবাইক চালিয়ে কর্মস্থলে যান, তরুণরা কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে যায়। অন্যদিকে যানজট এড়াতে অনেক মোটরসাইকেল চালকের কাছে ফুটপাত হয়ে ওঠে মূল সড়ক। সড়কজুড়ে চলে তাদের মহোৎসব। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার হেলমেট ছাড়া। আবার অনেকের হেলমেট থাকলেও দেখা যায় হাতে নিয়ে বসে থাকতে। অনেকে ভিআইপি গাড়ির মতো সাইরেন বাজিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন ফুটপাত ও মেইন রাস্তা থেকে। ইদানীং রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়িতে এমনিতে দুর্ভোগের শেষ নেই। জ্যামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। সময় বাঁচাতে বাস থেকে নেমে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মতো জায়গাটুকুও থাকে না। ফুটপাতে একটার পর একটা মোটরসাইকেল লাইন ধরে যায়। অর্থাৎ মোটরবাইক বহু ধরনের সমস্যা তৈরি করছে, যা নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার।

মোটরবাইকের বেপরোয়া চলাচল অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ত্যক্তবিরক্ত হয়ে অনেকে মোটরসাইকের বন্ধের পক্ষে মত দিয়ে থাকেন। তবে সেটা বাস্তবানুগ বলে প্রতীয়মান। কারণ মোটরবাইকের জনপ্রিয়তা রয়েছে। এতে সময় সাশ্রয় হয়। মানুষ গণপরিবহণের দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পায়। তাই মোটরবাইক রেখেই উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের কথা ভাবতে হবে। নিসন্দেহে কোনো মোটরসাইকেল আরোহী যদি ফুটপাতে যায়, সেক্ষেত্রে কয়েকটি সমস্যা তৈরি হয়। প্রথমত, সে ট্রাফিক রুলস মানছে না। দ্বিতীয়ত, জনগণের জন্য সে জননিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। তৃতীয়ত, একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনায় ক্ষতিও হতে পারে। এজন্য বাইকারদের অবশ্যই ট্রাফিক রুলস মানতে হবে। আর যারা অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং করছে তাদের নির্দিষ্টভাবে দাঁড়ানোর কোনো জয়গা নেই। এদের জন্য নির্দিষ্ট পয়েন্ট থাকতে হবে। বাইকের জন্য সরকার রেজিস্ট্রেশন ফি নিচ্ছে, লাইসেন্স ফি নিচ্ছে। এই অর্থ রাজস্ব খাতে যোগ হচ্ছে। তাই বাইক যাত্রাকে নিরাপদ করতে সরকার দায় এড়াতে পারে না। নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত