ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে রোগাক্রান্ত গরু

প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিন
সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে রোগাক্রান্ত গরু

খামারিদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশে গরুর সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। কোরবানি ঈদে গরু-ছাগলের ব্যাপক চাহিদা এখন দেশের ভেতর থেকেই জোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে। এই অবস্থায় বিদেশ থেকে চোরাচালানে গরু আসা হুমকিস্বরূপ। আর গরু যদি হয় রোগাক্রান্ত, সেটা আরও আশঙ্কাজনক। বাস্তবে এমন ঘটনা ঘটছে মিয়ানমার সীমান্তে। সেখান দিয়ে দেশে ঢুকছে রোগাক্রান্ত গরু। তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের গবাদি পশুর মধ্যে ক্ষুরারোগ (ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ) ছড়িয়ে পড়েছে, এ কারণে দেশটি থেকে পশুর আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে থাইল্যান্ড। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি পোষাতে মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা চোরাচালানের মাধ্যমে কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে গবাদি পশু পাচার অব্যাহত রেখেছেন। প্রকাশ, সম্প্রতি এ চোরাচালান আরও বেড়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সীমান্ত সংশ্লিষ্ট অনেক সূত্র। প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত এ চোরাচালান বন্ধ করা না গেলে দেশের গবাদি পশুর মধ্যে ক্ষুরারোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ও চোরাইপথে আসা গরু-মহিষের কারণে বিপাকে পড়েছেন দেশীয় পশু খামারি ও ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়দের বরাতে প্রকাশ, সীমান্ত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে হাটে প্রচুর বর্মি গরু-মহিষ বিক্রি হচ্ছে। দেশি গরু বিক্রি করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি বিক্রি করতে গেলে দেশি গরুকেও চোরাচালানের পশু আখ্যা দিয়ে জব্দ করা হচ্ছে। বিষয়টি অনভিপ্রেত।

কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িসহ একাধিক উপজেলায় বিপুলসংখ্যক মিয়ানমারের গবাদি পশু ঢুকেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এসব পশুর অধিকাংশ রাখা হচ্ছে রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়ন, কচ্ছপিয়া ও চকরিয়ার বিভিন্ন স্থানে। এমনকি মিয়ানমার থেকে আসা ওই পশুর হাঁটও বসছে ওই এলাকায়। অর্থাৎ গরু যেমন ঢুকছে, তেমনি বিক্রি হচ্ছে রাখঢাক না রেখে প্রকাশ্যেই। আরও জানা যায়, গত বছর কোরবানির ঈদের আগে থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন অন্তত শতাধিক গরু-মহিষ দেশে প্রবেশ করে। এ পাচারের পথ হিসেবে আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়িকে বেছে নিয়েছে চোরাকারবারিরা। এছাড়া সীমান্তের আরো বেশ কিছু পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারের গবাদি পশু দেশের বাজারে ঢুকে পড়ছে। পাচারের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিকভাবে একে অন্যের প্রতিপক্ষ হলেও পাচার-সংশ্লিষ্টতা ও ব্যবসার ক্ষেত্রে তারা একাট্টা বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। হাটে পশু বিক্রি থেকে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করার কাজটি আবার নিয়ন্ত্রণ করছে বেশ কয়েকটি সক্রিয় চোরাচালান সিন্ডিকেট। বলা যায়, এভাবে একটি দুষ্টচক্র গড়ে উঠেছে, যারা অত্যন্ত সুচারুভাবে গরু চোরাচালানের ব্যবস্থাটি জারি রেখেছে। স্থানীয় পর্যায়ে এ নিয়ে বিতর্ক ও একের পর এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে হাটে চোরাচালানের গবাদি পশু বিক্রি বন্ধে প্রশাসন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বটে, তবে তা খুব একটি কার্যকর নয় বলে দাবি করছেন স্থানীয় খামারিরা।

আগেই বলা হয়েছে, মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা এসব গবাদিপশু নিয়ে সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো ক্ষুরারোগ। এ রোগ খুবই বিপজ্জনক। সামান্য গাফিলতিতে ভাইরাসঘটিত এ ছোঁয়াচে রোগ সবখানে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অন্যদিকে বর্মি গরু ঢোকায় স্থানীয় খামারিরা লোকসানের মুখে পড়ছেন। আগামী কোরবানির ঈদের আগে যদি এসব গবাদি পশুর চোরাচালান বন্ধ করা না যায়, তাহলে খামারি ও কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এই অবস্থায় সীমান্ত দিয়ে পশু প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে। সীমান্তবর্তী জেলা ও উপজেলা দিয়ে যাতে এসব রোগাক্রান্ত ও অবৈধ পশু প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি দেশীয় গরুর সঙ্গে এসব রোগাক্রান্ত বিদেশি পশু যাতে কোনোক্রমে মিশে না যায়, সে বিষয়েও প্রত্যেক খামারিকে নজর দিতে হবে। উপরন্তু চোরাচালানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত