শীতকালে উৎপাদিত আলু সবজি হিসেবে সারা বছরই হাতের নাগালে সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। এটা সম্ভব হচ্ছে কোল্ডস্টোরেজে আলু সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা থাকার দরুন। কিন্তু অন্যান্য শীতকালীন সবজি সংরক্ষণাগার ব্যবস্থা না থাকার ফলে সেগুলো যেমন সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না, পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে অনেক সবজি। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, শীতকালীন অন্যান্য সবজি গরমের জন্য সংরক্ষণ করা হয় না? কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, দেশে এখন ৪১৪টি কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশের বেশি ব্যবহার হয় আলু সংরক্ষণের জন্য। বাকিগুলোতে আমদানি করা মাল্টা, কিছু স্টোরেজে মাছ-মাংস, শুকনো মরিচ, হলুদ, আদা সংরক্ষণ করা হয়। অর্থাৎ সবজি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। উল্লেখ্য, শীতে বাংলাদেশের কৃষক যে পরিমাণ সবজি উৎপাদন করে, গরমের সময় সবজির উৎপাদন তার চেয়ে আট গুণ কম হওয়ায় বাজারে সরবরাহও কম থাকে, বেড়ে যায় দাম। আলু কোল্ডস্টোরেজে রেখে বছরজুড়ে সরবরাহ হলেও শীতে উৎপাদিত অন্য সবজি গরমের সময় বাজারে পাওয়া যায় না। এর ফলে শীতে একেবারেই সস্তায় সবজি কিনতে পারলেও গ্রীষ্মে উৎপাদিত সবজির দাম বেড়ে যায় তিন গুণ। যেমন শীতের শেষভাগেও বেগুন ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, গরম পড়ার মাসখানেক ধরে এই বেগুন কিনতে হচ্ছে মানভেদে ৬০-৮০ টাকা দিয়ে। টমেটোর দাম শীতে ২০-২৫ টাকায় নামলেও গ্রীষ্মে আমদানি হয়ে আসা টমেটো কিনতে হয় ৮০-১০০ টাকায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) শীতকালীন অন্তত ২৯ জাতের শাকসবজির উৎপাদনের তথ্য প্রকাশ করে। শীতকালীন এই সবজিগুলোর মোট উৎপাদন ১ কোটি ৩৬ লাখ টন, যা গরমে নেমে আসে মাত্র ১৫ লাখ টনে। যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, গরমে সবজির উৎপাদন ৮৫ লাখ টন। অধিদপ্তরের হিসাবেও গ্রীষ্মকালে সবজির উৎপাদন শীতের চেয়ে ৫০ লাখ টন কম। তথ্যের এই হেরফের একটি মারাত্মক ত্রুটি। তবে যা সত্যি তা হলো, শীতে সবজি উদ্বৃত্ত থাকে, যা সংরক্ষণ করা গেলে সারা বছরই মোটামুটি সাশ্রয়ী মূল্যে ভোক্তারা সবজি পেতেন। অথচ শীতকালে বাড়তি উৎপাদনে দাম না পেয়ে কৃষকের বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি রাস্তায় ফেলে দেওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলুর মতো করে অন্য শীতকালীন সবজির একটা অংশ সংরক্ষণ করা গেলে শীত-পরবর্তী তিন-চার মাসে বাড়তি সরবরাহ তৈরি হয়, যা খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। তবে সবজি সংরক্ষণ বেশি ব্যয়বহুল এবং মানুষের মধ্যে শীতের সবজি গরমে খাওয়ার প্রবণতা কম থাকায় এখনও এটাকে লাভজনক মনে করেন না কোল্ডস্টোরেজ ব্যবসায়ীরা। এটা একটি অনুমান মাত্র, কারণ এ নিয়ে আদতে কোনো গবেষণাও নেই, সরকারিভাবেও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই।
উল্লেখ্য, গ্রীষ্মে বিদেশ থেকে সবজি আমদানির তথ্য রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে কোল্ডস্টোরেজ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফলমূল, গাজর, টমেটো, পেঁয়াজ, আনারস, কলা, ঢ্যাঁড়শ, কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি স্টোর করা হয়ে থাকে। জানা যায়, ভারতে স্টোরেজ সিস্টেম ডেভেলপ করার জন্য বিনিয়োগকারীদের বিভিন্নভাবে প্রণোদনা প্রদান করে সরকার। সবজি কাটা-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি বা পোস্ট হার্ভেস্ট লস কমিয়ে আনার জন্য দেশে অবশ্যই সবজি সংরক্ষণাগার গড়ে তুলতে হবে, আর এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে সরকারকে প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে পণ্যের পরিমাণ বাড়বে, কৃষকের লোকসান কমবে। আর ভোক্তারা সারাবছরই সুলভে পাতে সবজি পাবেন।