ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সংকট কাজে লাগিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ

দায়ীদের চিহ্নিত করা দরকার
সংকট কাজে লাগিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ

নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে তা যে স্বাভাবিক নয়, তা বিভিন্নভাবে আলোচনায় রয়েছে। এমন গুঞ্জন রয়েছে যে, সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাত ধরে পণ্যমূল্য বৃদ্ধিকে বাহানা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। যেমন সাম্প্রতিক সময়ে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে পণ্যের দাম বাড়ছে। এর একটি যৌক্তিকতা অবশ্যই আছে; কিন্তু এটা যে একমাত্র কারণ তা ওয়াকেবহাল মহলের বোধগম্য নয়। কারণ যুদ্ধের পর কিছু পণ্যের দাম কমলেও বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। দাম সর্বদা বাড়তির দিকে। এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করে, দেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা আছে। ফলে বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম নিম্নমুখী হলেও বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের দাম লাগামছাড়া। গরুর মাংস, চিনি, সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারের তুলনায় বাংলাদেশে অনেক বেশি। এ ছাড়া পণ্য সংকটের সুযোগ নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে সীমিত আমদানিকারকরা। অভ্যন্তরীণ নীতিমালা, সুশাসন, প্রয়োজনীয় সংস্কার না করার কারণে এসব দুর্লতা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে একদিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে, অন্যদিকে বাজারে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, দেশের খাদ্যে মূল্যস্ফীতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বিষয়টি যে অমূলক নয়, ভোক্তারা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

সাদা চোখে বলা যায়, বিশ্ববাজারে দাম কমার ফলে দেশে অনেক পণ্যের দাম বাড়ার কথা নয়, তারপরও বাড়ছে। আমদানি করা চিনিতে শুল্ক কমিয়েও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সূত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে চিনির দাম বেশি। সয়াবিন তেলের দামও বিশ্ববাজারে কমছে। কিন্তু দেশের বাজারে তার প্রতিফলন নেই। এ ছাড়া দেশে চালের দাম ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের চেয়ে বেশি, যদিও বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং বেশ অল্প পরিমাণে চাল আমদানি করে। সিপিডি বলছে, ফেব্রুয়ারিতে মাছ-মাংস বাদ দিয়ে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫.১১ শতাংশ, মাছ-মাংস যোগ দিলে মূল্যস্ফীতি ২৫.৩৭ শতাংশ। অথচ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ৮.১৩ শতাংশ। সরকারি ও বেসরকারি দুটি সংস্থার মূল্যস্ফীতির ফারাকটি লক্ষণীয়। সিপিডি বলছে, রাজধানী ঢাকায় ৪ সদস্যের একটি পরিবারের খাবারের পেছনে প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। অথচ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের যে আয় তা দিয়ে খাদ্যপণ্য কিনে টিকে থাকা কঠিন। কারণ একজন শ্রমিকের আয় এর চেয়ে অনেক কম। এ অবস্থায় সিপিডির পর্যবেক্ষণ, দেশের অর্থনৈতিক দুঃসময়ের কারণ হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধকে আর অজুহাত হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। সেটা এখন একমাত্র অজুহাত বলা ঠিক হবে না। অর্থনীতির ভেতরে যে দুর্বলতা রয়েছে, সেগুলো আসল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধের ফলাফল কিছুটা থাকলেও বাকিটা দেশের অর্থনীতির শক্তিমত্তার ওপরে নির্ভর করছে।

জনগণের স্বার্থেই বাজার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। আর এটা সরকারের লক্ষ্য উচিত হওয়া বলে আমরা মনে করি। এজন্য অবশ্যই অভ্যন্তরীণ নীতিমালা, সুশাসন, প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করা দরকার। সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা করতে হবে। অর্থনীতির গতি ফেরাতে সরকারের নানা উদ্যোগ আছে। তাতে খুব একটা সফলতা এসেছে দাবি করা যাবে না। ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে অর্থনীতি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতিরও উল্লেখযোগ্য উন্নতি নেই, বরং মাঝেমধ্যে কমছে- যা উদ্বেগজনক। এই অবস্থায় সরকারকে বেশ কিছু শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজারে গুটিকয়েক বড় ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকের প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নির্দিষ্ট আয় এবং নিম্ন আয়ের মানুষের চাহিদা পূরণের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা উচিত। এই নিয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে- এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত