দুর্ভোগে নিম্ন আয়ের পরিবার

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

জীবন-জীবিকায় সংকট নিয়েই দেশের বেশির ভাগ মানুষকে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়ে চলছে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যে পণ্য কিনে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত চাহিদা মেটানো অনেকের পক্ষেই দুরূহ হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় পাতে খাবারের পদ কমিয়ে, খাদ্যাভ্যাস বদলেও চলা দায় হয়ে পড়েছে। আর এর প্রভাবটি নিম্ন আয়ের পরিবারের ওপর অধিক পড়েছে, তা বলাই বাহুল্য। এ অবস্থায় সঞ্চয় হারিয়ে ধারকর্জ করেই নিম্ন আয়ের বড় অংশকে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। আর মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের প্রায় ৭৪ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার ধার করে চলছে- এমন তথ্য উঠে এসেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক জরিপে। সেখানে বলা হয়েছে, গত ছয় মাসে এসব পরিবারের ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ; কিন্তু তাদের আয় বাড়েনি। জরিপকারীদের কাছে ১৮ শতাংশ পরিবারের লোকজন দাবি করেছেন, গত ৬ মাসে এমন কিছুদিন গেছে, যেদিন তাদের পুরো দিনও না খেয়ে থাকতে হয়েছে। এছাড়া ৩৫ শতাংশ পরিবার তাদের সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে, আর সঞ্চয়বিমুখ হয়েছে ৫৫ শতাংশ পরিবার। আশঙ্কা, ভবিষ্যতে ভিক্ষা বা সাহায্য চেয়ে চলতে হতে পারে। দেশের গ্রাম ও শহরের নিম্ন আয়ের পরিবারের ওপর করা এই জরিপে যেসব পরিবার অংশ নিয়েছে, তাদের অধিকাংশ পরিবার জানিয়েছে অর্থনৈতিক চাপে তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন হয়ে গেছে।

যে কোনো জরিপ নিয়েই প্রশ্ন করার অবকাশ রয়েছে। সানেমের এই জরিপেরও দেশের সব নিম্ন আয়ের মানুষের চিত্র পুরোপুরি উঠে এসেছে কিংবা দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেড়েছে, এমনটা বলা না গেলেও সামগ্রিক অবস্থার একটা ধারণা অন্তত পাওয়া সম্ভব। সংস্থাটিও তাই মনে করে। আর সাধারণ পর্যবেক্ষণেও আমরা দেখি, শুধু নিম্নবিত্ত কেন মধ্যবিত্তও যাপনচর্চায় দারুণভাবে পর্যুদস্ত। মৌলিক চাহিদার ন্যূনতম জোগান দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিম্ন আয়ের মানুষ কেমন আছে, এর জন্য জরিপ না করেও বলে দেয়া সম্ভব। এজন্য সানেমে জরিপে যা উঠে এসেছে, তা হয়তো অনেকের জানা। অর্থাৎ কোনো অবাক হওয়ার বিষয় নয়। সানেমের জরিপে দেখা যায়, যারা ধার করে চলছে, তাদের ধার করা বন্ধ হয়েছে বা বন্ধ হবে- এমন পরিস্থিতি এখনও আসেনি। বরং পরিস্থিতি যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে ৮৫ শতাংশ পরিবার মনে করে যে, আগামী ৬ মাসে তাদের আরও ধার করতে হবে। তথ্য অনুযায়ী, বিগত ৬ মাসে ধারের উৎস হিসেবে ৪৫ শতাংশ পরিবার বেছে নিয়েছে ক্ষুদ্র ঋণের প্রতিষ্ঠান। মনে করা হয়, এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ সুদের দুষ্টচক্রে পড়ে এবং পরে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। ধার করার জন্য আরও অনেক পথ খুঁজছে মানুষ। এর মধ্যে ৩৭ শতাংশ পরিবার আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। সমবায় সমিতি থেকে ধার করছে ২৩ শতাংশ পরিবার। এছাড়া ব্যাংক ও মহাজনি ঋণ নিয়েছে যথাক্রমে ১৪ ও ৩ শতাংশ পরিবার।

নিম্ন আয়ের মানুষের এই পরিস্থিতির জন্য বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, দেশে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও বাজার অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে সানেম। তবে এটাও লক্ষণীয়, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করা হলেও তা অর্ধসত্য হবে। কারণ বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম কমলেও দেশে তার প্রভাব পড়েনি, আবার বাড়লেও দেশে পণ্যমূল্য বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। এখানে বাজার দুর্বলতা একটি বড় বিষয়। এ অবস্থায় কল্যাণমুখী উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সরকারকেই পরিস্থিতি সহনীয় করতে হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টিতে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে- এটাই প্রত্যাশা।