ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আপনাদের ভাবনা

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে

জিহাদ হোসেন রাহাত
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে

সড়ক দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ যখন এসেই পড়েছে, তখন বলতেই হয়- ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ঢাকার শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বিমানবন্দর সড়কে বাসের জন্য ছিল অপেক্ষায়। এক পর্যায়ে একটি বাস থামলে সেটিতে ওঠার চেষ্টা করে শিক্ষার্থীরা। ওই সময় জাবালে নূর পরিবহণের দুটি বাস অধিক যাত্রী তোলার জন্য প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে অতিরিক্ত গতিতে ছুটে আসে, তখন দুটি বাসের মধ্যে একটি বাস বেপরোয়াভাবে প্রথম বাসের পাশে ফুটপাতের ওপর দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের ওপরে উঠে যায়। এতে সেদিন ঘটনাস্থলে ঝরে যায় দুটি তাজাপ্রাণ। গুরুতর আহত হয় নিহত দু’জনের আরও ১২ জন সহপাঠী। এমন শতসহস্র হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী বাংলাদেশের প্রতিটি সড়ক-মহাসড়ক ও দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি। সেদিনের সেই সড়ক দুর্ঘটনাকে শুধু দুর্ঘটনা নয়, বলা চলে হত্যাকাণ্ড। সেসময় রাজধানী শহর ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিক মহলের আন্দোলন-চাপের মুখে দুই ঘাতক চালক-হেলপারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ছাত্রদের ৯ দফা আন্দোলনের মুখে সড়ক পরিবহণ নীতিমালা-২০১৮ প্রণয়ন করা হলেও বর্তমানে সেটির যথাযথ বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে। যদি এর যথাযথ প্রয়োগ থাকত, তাহলে দেশে দিনকে দিন বাড়ত না সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা। জেগে ঘুমানো কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙাবে কে?- সেটিও এখন প্রশ্ন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে চলমান বৈধ গাড়ির সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ লাখ ৪২ হাজার, অথচ বৈধ লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৬ লাখ ৪০ হাজার। অর্থাৎ দেশে প্রায় ৯ লাখ গাড়ি লাইসেন্সবিহীন চালক দ্বারা চালিত হতো। ওই হিসাব অনুযায়ী ২০১৮ সালে দেশে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪ লাখ ৯৯ হাজারের মতো। বিস্ময়ের বিষয় হলো, ২০২৩ সালে এসে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা কমা তো দূরে থাক বরং বাড়ছে হুহু করে। তার ওপর লাইসেন্স নিতে বাড়ছে চালকদের অনীহা। এর কারণ হলো- পরীক্ষা দিয়েও সময় মতো লাইসেন্স বুঝে না পাওয়া। চরম অব্যবস্থাপনায় চলছে এ কার্যক্রম। তার একটি উদাহরণ তুলে না ধরলেই নয়, চলতি বছরের (২০২৩) ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখের ঘটে অদ্ভুত এক কাণ্ড। ২০২১ সালে নাহিদ নামের এক ব্যাক্তি ড্রাইভিং লাইসেন্স (ট্রাক) করতে দিয়ে এ বছরের উল্লেখিত দিনে এসে পান ছয় বছর আগের মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স। অবশ্য এ ঘটনাটি ফলাও করে প্রচার করেছিল দেশের নামকরা সব সংবাদমাধ্যম। এ ঘটনার মাধ্যমেই বোঝা যায়, লাইসেন্স ছাড়াই চালকদের চালাতে হচ্ছে গাড়ি। আবার অনেকে এমন ঝুট-ঝামেলার কারণে করতে চান না লাইসেন্স। ফলে সম্ভব হচ্ছে না, তাদের দক্ষতার পরিমাপ করা। শুধু যে বড় গাড়ির ক্ষেত্রে লাইসেন্স পেতে চালকদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ তা কিন্তু নয়। এক্ষেত্রে দেয়া যায় আরেকটি উদাহরণ, ১ বছরেরও বেশি সময় আগে জিয়াউল হক নামের লক্ষ্মীপুরের এক কলেজ শিক্ষক ডাইভিং লাইসেন্সের (মোটরসাইকেল) জন্য পরীক্ষা-প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েও পাচ্ছেন না সেটি। শুধু তিনি নন এমন সমস্যা পোহাতে হচ্ছে দেশের অনেক নাগরিকদের। এই সমস্যার উত্তরণ জরুরি।

লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালকে সয়লাব দেশের পরিবহণ সেক্টর। ফলে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণা অনুযায়ী, এসব সড়ক দুর্ঘটনার ৫৩ শতাংশ ঘটে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে; ৩৭ শতাংশ চালকের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে এবং বাকি ১০ শতাংশ গাড়ির ত্রুটি ও পরিবেশের কারণে। এক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগে প্রচলিত আইনের কঠোর বাস্তবায়নের পাশাপাশি সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সচেতনার সঙ্গে কাজ করতে হবে। লাইসেন্স প্রদান ও পরিক্ষণে বাড়াতে হবে গতি। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধে নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। তবেই কমিয়ে আনা যাবে, দেশের সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ।

তরুণ কলামিস্ট

[email protected]

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত