ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আত্মহত্যা এক মহাব্যাধি

মিসবাহুল ইসলাম
আত্মহত্যা এক মহাব্যাধি

বাধ্যতামূলক স্যার নয়, স্বাচ্ছন্দ্যে হোক সম্বোধন!

রিয়াদ হোসেন

‘কর্মকর্তা’ বহুল পরিচিত একটি শব্দ। যেটি দ্বারা সচরাচর কোনো প্রতিষ্ঠান বা দপ্তরের প্রথম সারি কিংবা ঊর্ধ্বতন পদবিতে কর্মরতদের বোঝানো হয়। সাধারণ মানুষের সেবা দানের উদ্দেশ্য নিয়ে এসব দপ্তরের বিভিন্ন পদবিতে চাকরি করেন তারা। যেখানে জনগণের সেবা দেয়ায় তাদের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম নিচ্ছে এই স্বাধীন বাংলায়। উপজেলা প্রশাসনের প্রধান নির্বাহী অফিসার কিংবা জেলা প্রশাসককে ‘স্যার’ শব্দটি ব্যবহার না করায় তাদের মধ্যে ক্ষোভের উদ্রেক দেখা যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। যেটা নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বারবার বিবৃতি দেয়া হচ্ছে। তবুও দায়িত্বশীল কিছু কর্মকর্তাদের এ দৃষ্টিকোণ পরিবর্তন হচ্ছে না। দেখা গেছে, কখনও কোনো সাংবাদিক সংবাদ সংশ্লিষ্ট কাজে তাদের বক্তব্য সংগ্রহ করতে গিয়ে স্যার না ডাকায় তারা ক্ষেপে উঠেছেন অনেক সময় দুর্ব্যবহারও করেন। যা বর্তমানে শুধু সাংবাদিক নয়, প্রতিটি শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটছে। সবশেষ রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীনকে ‘স্যার’ সম্বোধন না করায় তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক উমর ফারুককে স্যার বলতে বাধ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যেটা নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং ফেইসবুকজুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

কিন্তু সব আলোচনাকে হাতে রেখে আমরা যদি আমাদের দেশ পরিচালনার যে দলিলটি রয়েছে, সেদিকে লক্ষ্য করি- তাহলে দেখা যাবে, স্বাধীন এই সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংবিধানে কোথাও কর্মকর্তা বলে স্বীকৃত কোনো শব্দ নেই। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের সবাই ‘কর্মচারী’। ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনে বলা আছে ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কর্মচারী।’ অর্থাৎ ‘কর্মকর্তা’ বলে কোনো শব্দ নেই। তবুও বারবার কেন আমরা দেশের প্রথম সারির নাগরিকদের কাছ থেকে এমন উদ্ধৃত আচার-আচরণ লক্ষ্য করছি, সেটা কোনোভাবেই বোধগম্য নয়। আরও খেয়াল করলে দেখা যাবে, ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী বিধিমালায় নাগরিকদের সঙ্গে যেকোনো অসদাচরণ শাস্তিযোগ্য হবে, এমনটি লেখা আছে। সুতরাং প্রতিনিয়ত যেসব কৃষক, দিনমজুর, খেটে-খাওয়া মানুষ কাজের জন্য গিয়ে হয়রানির শিকার হন কিংবা স্যার না ডাকায় অপমানিত হন, সেটা নিশ্চয় সংবিধান অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সরকারি চাকরিজীবীদের অবশ্যই মনে রাখা উচিত যে, এ রাষ্ট্রের মালিক এদেশের সাধারণ জনগণ। তাদের কষ্টে উপার্জিত টাকার অংশে আপনার বেতন হয়। তারা কোনোভাবেই আপনাকে স্যার ডাকতে বাধ্য নয়। এ ভাবনা থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা যতদিন বের হতে না পারবে, ততদিন এ দেশ বঙ্গবন্ধুর দেখা স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে উঠবে না।

এ জন্য চাকরিতে প্রবেশের সময় তাদের প্রশিক্ষণকালে এ বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে উপস্থাপন করতে হবে। তাদের চিন্তাধারার পরিবর্তন আনার মধ্যে দিয়ে অবশ্যই এমন পরিস্থিতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব। যেহেতু তাদের প্রশিক্ষণকালীন সময়টি তাদের পরবর্তী চাকরি জীবনে বড় প্রভাব রাখে। সেহেতু সে সময়কালেই তাদের মধ্যে যদি বিষয়টি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা যায় যে, সরকারি কর্মচারীরা জনগণের সেবক, প্রভু নয়। জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় আপনার বেতন হয়। তারা আপনাকে স্যার বলতে বাধ্য নন, বরং আপনিই সেবাগ্রহীতাদের স্যার বলবেন। তবে জনগণকে সম্মান দিয়ে ‘স্যার’ বলছে প্রথম সারির অনেক চাকরিজীবী এমন উদাহরণও কিন্তু রয়েছে। দেখা গেছে, বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবস্থিত সমাজসেবা অফিসের দপ্তরে প্রতিদিন যতো লোক আসেন, তাদের সবাইকেই ‘স্যার’ সম্বোধন করেন সাজ্জাদ পারভেজ নামে ওই অফিসে কর্মরত প্রধান ব্যক্তি। ২০১৮ সাল থেকে তিনি সেবাপ্রত্যাশীদের ‘স্যার’ সম্বোধনের চর্চা করে আসছেন। যা অবশ্যই আমাদের অনেক চাকরিজীবীর জন্য অনুকরণীয়। এজন্য আমাদের সুস্থ মানসিকতাই একমাত্র এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে উঠে আসতে সাহায্য করতে পারে। পাশাপাশি আমাদের মনে রাখতে হবে, জোর করে শ্রদ্ধা-ভক্তি আদায় না করে ভালো ব্যবহার এবং সংশ্লিষ্ট কাজের মধ্যে দিয়েও মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া যায়।

শিক্ষার্থী

সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

[email protected]

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত