ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ট্রেন-বাস সংঘর্ষে সচেতনতা জরুরি

মো রুকন উদ্দিন
ট্রেন-বাস সংঘর্ষে সচেতনতা জরুরি

বাংলাদেশে ট্রেন-বাস সংঘর্ষ এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এতে হতাহতের সংখ্যাও কম নয়। আমাদের চিন্তা করা উচিত, যে মানুষগুলো মারা যাচ্ছে, তারা একেকজন একেকটি পরিবারের আদরের সন্তান, পরিবারের আয়কর্তা। তাদের বিয়োগে পরিবারগুলো করুণ অবস্থা, কেউ কি খবর নিচ্ছে? কয়েক দিন আগে রাজধানীর মালিবাগে ট্রেন-বাস সংঘর্ষ হয়, ভাগ্য ভালো যে, বাসে যাত্রী ছিল না। এ ছাড়া আমরা যদি বিভিন্ন দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখা যাবে উভয়পক্ষের দোষ আছে। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি দুর্ঘটনা আমরা দেখতে পারি- গাজীপুরের শ্রীপুরে ট্রেনের সঙ্গে গার্মেন্টসের শ্রমিকবাহী একটি বাসের সংঘর্ষে বাসচালকসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানান, চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার ঝাউতলায় বাস-অটোরিকশা ও ট্রেনের ত্রিমুখী সংঘর্ষে এক ট্রাফিক কনস্টেবলসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এতে আরও আটজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

রাজধানীর খিলগাঁওয়ে চলন্ত ট্রেনের ধাক্কায় একবৃদ্ধা মারা গেছেন। তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বাগিচা এলাকায় ট্রেন তাকে ধাক্কা দেয়।

এভাবে ঘটে যাচ্ছে অসংখ্য দুর্ঘটনা। তাহলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না কেন এবং এর জন্য দায়ী কে? সালমা খাতুন ট্রেনচালক তিনি মনে করেন, ট্রেনের লাইনের উপর গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকা, যানযটে গাড়ি লাইনের উপর দাঁড়িয়ে থাকা, রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় ব্যারিকেট আছে তাকে উপেক্ষা করা, রেলের দরজার মধ্যে এবং ছাদে গাদাগাদি করে উঠাসহ আরও অসংখ্য কারণ তিনি উল্লেখ করেন। ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে দেখলাম দুই যুবক রেললাইনে দাঁড়িয়ে সেলফি নিচ্ছে। এসব কিছু দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এক জরিপে দেখা যায়, সারা দেশে লেভেলক্রসিং রয়েছে ২ হাজার ৫৪১টি, এর মধ্যে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য গেটম্যান আছে মাত্র ৩৭১টি লেভেলক্রসিংয়ে। বাকি ২ হাজার ১৭০টি লেভেলক্রসিংই অরক্ষিত বা সব সময় গেটম্যান ছাড়া খোলা থাকে, যার মধ্যে ১ হাজার ৪২টি রেলওয়ের অনুমোদিত, বাকিগুলো অননুমোদিত। কিন্তু যেগুলো অনুমোদিত, সেগুলোতেও নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই।

কিছু লেভেলক্রসিংয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে বলা হয়েছে- ‘এখানে কোনো গেটম্যান নেই, খুব হাস্যকর ব্যাপার যে, যেখানে মানুষের নিরাপত্তার বিষয় আছে, সেখানে আপনি এভাবেই খোলা রাখতে পারেন না, আরও লেখা আছে, সব যানবাহন চালক নিজ দায়িত্বে পারাপার করুন...’।

এতেই কি রেলওয়ের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? যেসব লেভেলক্রসিং অননুমোদিত কিংবা অনুমোদনের শর্ত মানছে না, সেসব লেভেলক্রসিং দেওয়াল তুলে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে না কেন?

আসলে এগুলো হচ্ছে দুর্ঘটনায় দায় এড়ানোর জন্য অজুহাতমাত্র। কিন্তু কোনো অজুহাত দিয়েই রেলওয়ে এই শোকাবহ হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে পারে না। যদিও আমরা দেখি, বারোবাজার ও মালিবাগ- উভয় স্থানেই গেটম্যান ছিল। তাহলে আসল সমস্যা রেলওয়ের ব্যবস্থাপনায়। সেই ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতার কারণেই শুধু ট্রেন-বাস নয়, প্রায়ই দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, উপর্যুপরি লাইনচ্যুতিসহ নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। আমি মনে করি, রেলওয়ের ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমেই শুধু এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হতে পারে।

শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত