ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ট্রেনযাত্রীরা অসহায়

বিনিয়োগের সুফল নিশ্চিত করতে হবে
ট্রেনযাত্রীরা অসহায়

রেলের উন্নয়নে সরকারের বিনিয়োগের অন্ত নেই। তবে এটাও বাস্তবতা যে, এখানে যাত্রী হয়রানিরও শেষ নেই। বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে প্রায়ই মিডিয়ায় খবর আসছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, অনিয়ম ও দুর্নীতি রেলওয়ের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিরূপে জড়িয়ে পড়েছে। প্রকাশ, রেলওয়েতে শুধু চলমান ৩৯টি প্রকল্পেই বরাদ্দের পরিমাণ পৌনে ২ লাখ কোটি টাকা। বলা যায়, রীতিমতো উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে রেল। অর্থের পরিমাণে এ দাবি করাই যায়। কিন্তু যাত্রীসেবা সেই তিমিরেই। অভিযোগ, আড়ালে পাল্লা দিয়ে মোটাতাজা হচ্ছে দুর্নীতির ‘কালো বিড়াল’। আরও অভিযোগ রয়েছে- জড়িতদের চিহ্নিত করাসহ তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কখনও নেয়া হয় না। ব্যাপকার্থে বলা যায়, রেলে দুর্ঘটনা, যাত্রী হয়রানি থেকে শুরু করে অব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট কাউকে জবাবদিহির আওতায় আনার নজির তেমন দৃশ্যমান নয়। এসব কারণে রেলের শত অনিয়ম-দুর্নীতির কাছে সাধারণ যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এ যেন অসহায় আত্মসমর্পণ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, দায়িত্বশীলদের অনেকেই ছুটছেন কালো টাকার পেছনে। যে কারণে রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণ, স্টেশন সংস্কার ও টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে নজর নেই তাদের। অথচ সে তুলনায় চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের শাস্তি হয়নি বললেই চলে। নামমাত্র কয়েকজনের চাকরি গেছে, যা অনভিপ্রেত।

নির্দ্বিধায় বলা যায়, রেলে যাত্রীসেবা তলানিতে নেমেছে। সেবা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। স্পষ্টত, দেশের প্রধানতম স্টেশন ঢাকার কমলাপুরে ঢুকলেই সারা দেশের রেল সেবার পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায়। এখানে স্টেশন চত্বর ঢাকা পড়েছে ময়লা-আবর্জনায়। প্ল্যাটফরমের নিচে রেললাইন জুড়ে মলমূত্র ও নোংরা পানিতে সারাক্ষণ ঠাঁসা থাকে। ওদিকে প্ল্যাটফরমে সারাক্ষণ লেগে থাকে ছিন্নমূল মানুষের জটলা। নেশাগ্রস্তদের উৎপাতে নিরাপত্তাহীন পরিবেশ। যে কোনো মুহূর্তে টানা পার্টি ও ছিনতাইয়ের কবলে পড়ার আশঙ্কা থাকে। স্টেশনে সুপেয় পানির যেমন তীব্র সংকট রয়েছে, তেমনি গণশৌচাগার নিয়ে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে রেলস্টেশনের সংখ্যা ৪৪৮টি। তবে প্রধান স্টেশনের অবস্থা এমন হলে বাকিগুলোর অবস্থা কী তা সহজেই অনুমেয়। আর এসব স্টেশনের মধ্যে মাত্র ৭টিতে প্ল্যাটফরমজুড়ে ট্রেন দাঁড়াতে পারে। বাকিগুলোয় ট্রেনের ৪ ভাগের ৩ ভাগই প্ল্যাটফরমের বাইরে থাকে। ফলে রোদ-বৃষ্টি এবং রাতে অন্ধকারে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আবার ৯০ শতাংশ স্টেশন প্ল্যাটফরম থেকে ট্রেনের উচ্চতা বেশি। উচ্চতা বেশি হওয়ায় ট্রেনে উঠতে গিয়ে হরহামেশা দুর্ঘটনার কবলে পড়েন যাত্রীরা। আর টিকিট বাণিজ্য এখানে বহুল চর্চিত বিষয়। এখানে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা সারা বছর লেগে থাকে। কয়টার ট্রেন কয়টায় ছাড়ে- এই ধরনের হাস্যরস এখানে চালু আছ। এদিকে গত এক যুগে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপে ২ জন টিটিই, ১ জন প্রকৌশলীসহ পাঁচজন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। এভাবে হাজারও আপদের মধ্যে ট্রেনে চড়া যাত্রীদের জন্য নিঃসন্দেহে ভীতিকর হয়ে ওঠছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রেলে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনেক ক্ষেত্রেই প্রমাণিত। ফলে যাত্রীসেবা প্রশ্নবিদ্ধ। অথচ যাত্রীদের ঘিরেই সরকারের যত উদ্যোগ-বিনিয়োগ, তা এভাবে বিফলে গেলে কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। এতে সরকারের সদিচ্ছা বাস্তবে রূপ পায় না। রেলকে অবশ্যই সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও লাভজনক বাহনে পরিণত করতে হবে। সংগত কারণেই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি। পাশাপাশি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ঠিকাদার পর্যন্ত সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত