শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং

দ্রুত নীতিমালা চূড়ান্ত করুন

প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিংয়ে (শারীরিক, মানসিক বা অন্য কোনোভাবে হেনস্তা) শিকার হওয়া ভুক্তভোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এটি সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক অবক্ষয়ের নতুন একটি ধরন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। মিডিয়ায় এ নিয়ে সংঘটিত নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার কথা প্রায়ই শিরোনামে পরিণত হচ্ছে। মাঝেমধ্যে দুর্বিষহ যাতনায় কেউ কেউ আত্মহত্যা করারও খবর মিলছে। সংগত কারণেই বুলিং নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা তৈরির দাবি ওঠেছে, এ নিয়ে বেশ আগে থেকেই হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। স্মর্তব্য, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার পর (২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর আত্মহত্যা করে) ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ‘বুলিং’ প্রতিরোধে নীতিমালা তৈরির আদেশ দেন উচ্চ আদালত। নকলের দায়ে ওই শিক্ষার্থীকে অপমানের মাধ্যমে আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে চাকরিচ্যুত হন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস। তখন নীতিমালা তৈরিতে অতিরিক্ত শিক্ষাসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন আদালত। তবে, হাইকোর্টের নির্দেশ পাওয়ার ৪ বছর পরও বুলিং প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও কোনো নীতিমালা চূড়ান্ত হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, করোনার কারণে দীর্ঘসময় এ নীতিমালা সংক্রান্ত কাজ বন্ধ ছিল। এর পর থেকে ধাপে ধাপে চলছে কাজ। নীতিমালা যত দ্রুত হয় ততই মঙ্গল।

তথ্য অনুযায়ী, ৪ বছর আগে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বুলিং প্রতিরোধে নীতিমালা তৈরির নির্দেশ দেয়ার পর ২০১৯ সালে এবিষয়ক একটি খসড়া নীতিমালা হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। আদালত এটি সংশোধন করে আবার জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। এভাবে কয়েকবার এ নীতিমালা সংশোধন করে আদালতে জমা দেয়া হয়। প্রতিবারই হাইকোর্ট এটি সংশোধনের মাধ্যমে চূড়ান্ত করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে ‘বুলিং প্রতিরোধ নীতিমালা-২০২৩’ খসড়া প্রকাশ করা হয়। খসড়াটি সর্বশেষ চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষাসচিবের নেতৃত্বে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের একটি সভা হয়। তারপর পঞ্চমবারের মতো সংশোধিত নীতিমালা গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে জমা দেয়া হয়। একই দিন হাইকোর্ট আবার এটি সংশোধন করে চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। নীতিমালা চূড়ান্ত করার এরূপ দীর্ঘসূত্রিতা নিঃসন্দেহে হতাশাজনক। এদিকে বুলিং প্রতিরোধে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে মাউশি। গত জানুয়ারিতে এমন নির্দেশ দেওয়া হলেও এখনো মাউশির কাছে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কমিটি গঠনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানা যায়। ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসেস সূত্রে প্রকাশ, জেলার ৬২ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও বুলিং প্রতিরোধে কমিটি গঠন করা হয়নি। ৩৮ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠন করা হলেও শিক্ষকদের বুলিং বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ নেই। উল্লেখ্য, মাউশির আওতাভুক্ত ঢাকা জেলায় সরকারি, এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিওভুক্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, অনার্স ও মাস্টার্স স্তরের কলেজের সংখ্যা মোট ১ হাজার ১০৭। এর মধ্যে মাত্র ৪২১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং প্রতিরোধে কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য জেলাগুলোর অবস্থা তথৈবচ অনুমান করা যায়।

শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাতে প্রকাশ, তিন কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিংয়ের প্রবণতা বাড়ছে। এগুলো হলো বুলিংয়ের শাস্তি নিয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এ বিষয়ে সঠিক ধারণা না থাকা এবং বুলিং প্রতিরোধে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাব। একটু লক্ষ্য করলেও দেখা যাবে, টেকসই বুলিং নীতিমালার মাধ্যমে বুলিংয়ের কারণগুলো প্রশমিত করা সম্ভব। পাশাপাশি এখানে সাইবার বুলিংয়ের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। বুলিং নীতিমালা দ্রুত চূড়ান্ত হবে- এটাই প্রত্যাশা।