শিল্প খাতের উৎপাদনে বিপর্যয়

কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

করোনাকালের ধকল কাটিয়ে দেশের শিল্প খাত তথা অর্থনীতি দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে তা হোঁচট খায়। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাও রয়েছে। ফলে শিল্প খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলে, যা এখনও চলমান। উল্লেখ্য, গত প্রায় ১ বছর শিল্প খাতের মৌলিক উপকরণ- ডলার, গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেলের সংকট চলছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশেও। এর ধাক্কা লেগেছে শিল্পপণ্য উৎপাদনে। সূত্রমতে, এক বছরের ব্যবধানে এসব পণ্যের ২২টি খাতের ১৩টিতে উৎপাদন কমেছে। যেখানে আছে খাদ্য, বস্ত্র, চামড়াসহ বড় সব খাত। আর এগুলোর মধ্যে ৭টিতে আলোচ্য সময়ে গড়ে উৎপাদন বাড়েনি। বরং কমে নেতিবাচক পর্যায়ে চলে গেছে। যার প্রভাবে বাজারে খাদ্যসহ সংশ্লিষ্ট দেশীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বেড়ে গেছে দাম। একই অবস্থা আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রেও। এসব পণ্যের দাম বাড়ায় মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। তবে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ৯টি খাতে উৎপাদন বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য মোতাবেক প্রকাশ, ১ বছরের ব্যবধানে শিল্পপণ্যের উৎপাদন প্রায় তিন গুণ কমে গেছে। যেখানে গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে এ খাতে উৎপাদন বেড়েছিল প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে সাড়ে ৫ শতাংশের বেশি। ওই সময়ের ব্যবধানে উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমেছে ৯ শতাংশ।

লক্ষণীয় বিষয়, উৎপাদন কমার তালিকায় মানুষের ব্যবহৃত অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ সামগ্রীও রয়েছে। এগুলো একদিকে দেশের মানুষ ব্যবহার করে, অন্যদিকে রপ্তানিও হচ্ছে। কিন্তু উৎপাদন কমায় বাজারে যেমন পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে, তেমনি দামও বেড়েছে। একই সঙ্গে রপ্তানিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে একদিকে বৈশ্বিকভাবে পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, অন্যদিকে হু হু করে বেড়ে যায় দাম। এতে দেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়ে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যয় সাশ্রয় করার উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছরের এপ্রিলে পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন আরোপ করে। মে মাসে তা আরও বাড়িয়ে শতভাগ পর্যন্ত মার্জিন আরোপ করা হয়। সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাংকগুলো ডলারের সংস্থান করতে না পারায় এলসি খোলা সীমিত করে দেয়। একই সঙ্গে ডলারের দাম বেড়ে যায় ২৬ থেকে ৩০ শতাংশ। এতে শিল্প খাতের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি বাধাগ্রস্ত হয়। কাঁচামাল সংকটে বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলো এখন বন্ধের পথে। তাদের উৎপাদন কমেছে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ। কোনো কোনো খাতে আরও বেশি। মেটাল, রড, ইস্পাত শিল্পের উৎপাদন বহুলাংশে কমে গেছে। কারণ এসব খাতের কাঁচামাল আমদানি প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে গত বছরের জুন থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাবে সব ধরনের শিল্প পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। যে কারণে দামও বেড়েছে। এর বিপরীতে অর্থনৈতিক মন্দায় মানুষের আয় কমে গেছে। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমায় বিক্রিও কমেছে।

উৎপাদনের সঙ্গে জনজীবন অঙ্গাঙ্গীরূপে সংযুক্ত। উৎপাদন ব্যাহত হলে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়। বর্তমানে এমনই পরিস্থিতি রয়েছে বাংলাদেশ। এ অবস্থার উত্তরণে অত্যন্ত সুচারুভাবে কর্মপন্থা প্রণয়নের মাধ্যমে এগোতে হবে। কারণ শিল্প খাতে বর্তমানে যে অবস্থা, তা অব্যাহত থাকলে এই খাত গভীর সংকটে পড়বে। সংগত কারণেই টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।