ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ত্রুটি নিয়ে জন্মাচ্ছে নবজাতক

প্রতিরোধের কথা ভাবতে হবে
ত্রুটি নিয়ে জন্মাচ্ছে নবজাতক

বাংলাদেশের শিশুরা বেড়ে ওঠার ভালো একটি পরিবেশ কমই আশা করতে পারে। এখানে অনেক শিশু বঞ্চনার শিকার। আবার অসচেতনতার কারণে অনেক শিশু যথাযথভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় যে, জন্মগতভাবেই শিশুদের একটি অংশ ত্রুটি নিয়ে পৃথিবীতে আসে। উন্নত বিশ্বের চেয়ে দেশে নবজাতকদের ত্রুটি নিয়ে জন্মানোর হার বেশি। প্রতি বছর দেশের ৭ দশমিক ২ শতাংশ নবজাতক শারীরিক ত্রুটি নিয়ে জন্মাচ্ছে। গত ৮ বছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা দল জানিয়েছে, বিএসএমএমইউর নবজাতক বিভাগে ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চিকিৎসা নিতে আসা ১১ হাজার ২৩২ শিশুর ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। তার মধ্যে ৭৮৯টি শিশু জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মেছে। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব জন্মগত ত্রুটি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনার ও আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী জন্মগত ত্রুটির হার প্রতি ১০০ জনে ৩ জন। বিশ্বে প্রতি ৩৩ শিশুর মধ্যে ১ জন জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মায়। সারা বিশ্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জন্মগত ত্রুটির প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। প্রতি বছর শুধু জন্মগত ত্রুটির জন্য জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে প্রায় ৩ লাখ শিশু মারা যায়। শিশু মৃত্যুর এই প্রভাব টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

দেখার বিষয়, বাংলাদেশে ত্রুটিপূর্ণ নবজাতকের সংখ্যার বৈশ্বিক হিসাবের দ্বিগুণ। এটি একটি শঙ্কার কারণ। ধারণা করা যায়, মাতৃত্বকালীন যথাযথ পরিচর্য়ার অভাব ত্রুটিপূর্ণ শিশু জন্মানোর একটি কারণ। এ ছাড়া আরও কারণ অবশ্যই আছ। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সেগুলো চিহ্নিত করা দরকার। এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জন্মগত ত্রুটি চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দেওয়া দরকার। যেমন গর্ভ-পূর্ববর্তী এবং গর্ভকালীন সময়ে চেকআপ করা, গর্ভকালীন সময়ে (১৮-২২ সপ্তাহের মধ্যে) আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে জন্মগত ত্রুটি নির্ধারণ করা, গর্ভকালীন অসংক্রামক ব্যাধি যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, অল্প বয়সে এবং অধিক বয়সে গর্ভনিরোধ, আয়োডিনযুক্ত লবণের মতো খাবারের সঙ্গে ফলিক অ্যাসিড মেশানোর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ সম্ভব। উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও জন্মগত ত্রুটি নিয়ে একটি প্রকল্প রয়েছে। সেটি হলো ন্যাশনাল নিওনেটাল অ্যান্ড পেরিনেটাল ডাটাবেজ (এনএনপিডি) অ্যান্ড নিউবর্ন বার্থ ডিফেক্ট (এনবিবিডি) সার্ভিলেন্স ইন বাংলাদেশ অথবা সংক্ষেপে ‘বার্থ ডিফেক্ট সার্ভিলেন্স ইন বাংলাদেশ’। বাংলাদেশের ২০টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে এ প্রকল্প পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রকল্পটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এসইএআরও এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সহায়তা করে। আর বিএসএমএমইউর নবজাতক বিভাগ প্রকল্পটির কার্যক্রম প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করে।

শিশুরা স্বাস্থ্যোজ্জ্বলভাবে বেড়ে জন্মগ্রহণ করুক- এটা সবার প্রত্যাশা। এই নিয়ে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। মা ও শিশুর যত্ন ও চিকিৎসা সরকারি পর্যায়ে বেশ সুলভ। অভিভাবকদের মধ্যেও এখন মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পরও কেন অধিক হারে ত্রুটিপূর্ণ শিশু জন্মগ্রহণ করছে, তা পর্যালোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এই নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া দরকার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত