বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড

ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে

প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর কাপড়ের পাইকারি বাজার এবং খুচরো ক্রেতাদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় স্থান বঙ্গবাজার আগুনে ভস্ম হয়ে গেছে। স্মরণকালের ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে অনেক দোকানি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন, কেউ কোটিপতি থেকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কপর্দকশূন্য হয়ে পড়েছেন। অনেকের হারিয়েছেন তাদের কর্মসংস্থানের ভরসাটুকু। তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার ভোর ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারের আদর্শ মার্কেটে আগুন লাগে। এর পর এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ফায়ার স্টেশনের ৪৮টি ইউনিটের ৬৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে। অর্থাৎ আগুন নিয়ন্ত্রণে ছয় ঘণ্টার মতো সময় লাগে। এই সময়ে লেলিহান আগুনে পুড়ে যায় ৬টি মার্কেটের প্রায় ৫ হাজার কাপড়ের দোকান। পুড়ে ছাই হয়েছে কোটি কোটি টাকার কাপড়। নগদ টাকার সঙ্গে পুড়েছে কয়েক হাজার ব্যবসায়ীর কপাল। ঢাকার বড় পাইকারি কাপড়ের মার্কেট বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কোটিপতি থেকে নিঃস্ব হয়েছেন কয়েকশ’ ব্যবসায়ী। চোখের সামনে নিজের স্বপ্ন-সম্বল পুড়তে দেখে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। দেশব্যাপী মানুষ হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৫ হাজার দোকানের মালিক-কর্মচারী মিলিয়ে অন্তত অর্ধলাখ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আনুমানিক ২ হাজার কোটি টাকা।

বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট, গুলিস্তান মার্কেট, এনেক্সকো মার্কেট, ইসলামিয়া মার্কেট, বরিশাল প্লাজা ও মহানগর কমপ্লেক্স মার্কেট, হোমিও প্লাজা, গোল্ডেন প্লাজা, বঙ্গ ইসলামিয়া, সিটি প্লাজা আগুনে পুড়ে গেছে। সেখানে শাড়ি, শার্ট, প্যান্ট, সালোয়ার কামিজসহ সব ধরনের পোশাক বিক্রি হতো। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দোকানিরা লাখ থেকে কোটি টাকার মালামাল তুলেছেন। এখন আগুনে সব শেষ হয়ে গেছে, কিছুই নেই। সব কিছু হারিয়ে এখন ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা ভবিষ্যৎ ভাবনায় আতঙ্কগ্রস্ত। সংগত কারণেই জীবনের অনিশ্চিয়তার সঙ্গে তাদের মধ্যে ক্ষোভও কাজ করছে। তাদের অনেকের ভাষ্য, এই অগ্নিকাণ্ড রহস্যজনক। বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, ফায়ার সার্ভিস ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করলে রক্ষা পেত অধিকাংশ দোকান। এই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা করে ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরে। কিন্তু যতটুকু জানা যায়, কয়েক ফুট দূরত্বে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরের ফায়ার কর্মীরা দ্রুত আসেন আগুন নেভাতে। কিন্তু আগুনের তীব্রতা এতটা তীব্র ছিল যে, তা নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সময় লেগেছে। জানা যায়, ২০১৯ সালের ২ এপ্রিল এই ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এর পর ১০ বার নোটিশ দেয়া হয়েছিল। তারপরও মার্কেটটি কীভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

সাম্প্রতিক সময়ে একের পর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড জনমনে আতঙ্কেও সৃষ্টি করেছে। অনেকে এর মধ্যে রহস্যও দেখতে পারছেন। কেউ নাশকতামূলক কাজ বলে এগুলোকে চিহ্নিত করেছেন। ঘটনা যাই হোক তা চিহ্নিত করা দরকার। তাহলে জনমনে বিভ্রান্তি দূর হবে। পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে আমরা যে এখনও অসচেতন এবং প্রতিরোধের প্রস্তুতিও যে যথাযথ নয়, তা ফের বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে স্পষ্ট হলো। এ নিয়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটন করাও জরুরি। পাশাপাশি নিঃস্ব হয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের পাশে সরকারকে দাঁড়াতে হবে। এখানে জরুরিভিত্তিতে সরকারের প্রণোদনা ও অনুদান দরকার। আর মার্কেটগুলো ফের চালু করার আগে অবশ্যই অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।