অভিমত

কৃষকের অধিকার নিশ্চিত হলে বাড়বে উৎপাদন

জিহাদ হোসেন রাহাত, তরুণ কলামিস্ট, [email protected]

প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

চিরসবুজের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশের অর্থনীতি কৃষক-কৃষির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই বলা চলে, কৃষক হাসলে হাসবে দেশ, ফল-ফসলে ভরে উঠবে আমার সোনার বাংলাদেশ। আমাদের কৃষকরা দেশের সুসময়-দুঃসময় সবকালেই দেশের অর্থনীতির মূল খাত কৃষিকে আঁকড়ে ধরে আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তির সহায়তায় চাষাবাদ করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার কাজ করে যাচ্ছেন। করোনা মহামারির অতিমারির সময়ে আমরা দেখেছি কৃষি ছাড়া দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ কর্মহীন হয়ে এক ধরনের বেহাল দশায় পতিত হয়েছিল। লকডাউন কেন্দ্রিক সরকারি কঠোর নিষেধাজ্ঞায় সব পেশার কার্যক্রম এক ধরনের বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অথচ এত ঝড়ঝাপ্টার মধ্যেও আমাদের চাষি ভাইয়েরা মরণের ভয়কে উপেক্ষা করে ঠিকই কৃষিকাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন, যা প্রসংশার যোগ্যতা রাখে।

দীর্ঘ একটি সময় পেরিয়ে পুরো বিশ্বে মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য ঘাটতি, পরিবেশের নানা ধরনের দূষণ ইত্যাদি নেতিবাচক বিভিন্ন বিষয় এড়িয়ে পাওয়া গেল এক সুখবর, বোরো ধানের উৎপাদন দেশে রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী দেশের খেতাব অর্জন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই আনন্দঘন মুহূর্তে দাঁড়িয়ে কৃষি সংশ্লিষ্ট মহলকে উদ্দেশ্য করে আমি বলতে চাই, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই দেশ বাঁচাতে কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। সাম্প্রতিক সময়ে সয়াবিন তেলের বাজার নিয়ে যে তেলেসমাতির কাণ্ড ঘটেছে তার পুনরাবৃত্তি যেন আর না হয়, সেজন্যও সরকারসহ সব পক্ষকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে সব ধরনের খাদ্য পণ্যের অসহনীয় মাত্রায় মূল্য বাড়ছে। কিন্তু কৃষকরা যথাযথ দাম পান না। অথচ এর একটি বিরাট অংশ ঢোকে মধ্যস্বত্বভোগী আর দালালদের পেটে। এই সিন্ডিকেট ভাঙা জরুরি। সময় এসেছে, কৃষকের কষ্ট-সাধনার মূল্য দেয়ার। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে কৃষকের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

ফলে দেশের অভ্যন্তরে চালের দাম সহনীয় মাত্রায় থাকার পাশাপাশি অধিক উৎপাদনে মনোযোগী হবেন কৃষকরা। এতে করে কমবে আমদানিনির্ভরতা। বাঙালির আবহমান ঐতিহ্য, সংস্কৃতিজুড়ে ভারতের রয়েছে একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থান। কৃষিপ্রধান এই দেশে যেখানে ধান উৎপাদনে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার কথা, সেখানে আমরা নিচ্ছি চাল আমদানির নাম। দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করা হয়েছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। যদিও দেশের কৃষি উৎপাদন পরিসংখ্যানে উঠে আসছে এর ভিন্ন চিত্র। গত পাঁচ অর্থবছরে প্রধান খাদ্যশস্য চালে আমদানিনির্ভর থাকতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

অভ্যন্তরীণ তথ্য বলছে, দেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে। তবে এ সময় চালের মোট ভোগ ও ব্যবহার ছিল প্রায় তিন কোটি ৬৫ লাখ টন। সে মোতাবেক গত অর্থবছরে দেশে চালের ঘাটতি ছিল প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টন। আগের অর্থবছরে ২০২০-২১ এ ১৫ লাখ টন ঘাটতি ছিল। গণমাধ্যমে উঠে আসা তথ্য বলছে, গত পাঁচ অর্থবছরে চাল উৎপাদন এবং ভোগ ও ব্যবহারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ সময়ের পুরোটাই চালের ঘাটতি মোকাবিলা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। আর কত ঘাটতি মোকাবিলা করবে বাংলাদেশ? নতুন উৎপাদন কৌশল আদৌ অবলম্বন হবে কি-না? কিংবা হলেও কবে নাগাদ তা শুরু হবে- এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ভোক্তা মহলে।

সর্বোপরি চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি কমিয়ে আনার পাশাপাশি উৎপাদনে নজর দিতে হবে। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে জনশক্তি হিসেবে কাজে লাগানোর এখনই সময়। আমদানি কমিয়ে উৎপাদনে মনোযোগ কল্পে সরকারসহ সবপক্ষকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।