অগ্নিঝুঁকিতে থাকা মার্কেট

নিরাপত্তায় এখনই ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মঙ্গলবার আগুনে ভস্মীভূত হয় পুরো বঙ্গবাজার। এটা ছিল হাজারো ব্যবসায়ী-কর্মচারীর রুটি রুজির ঠিকানা। সব হারিয়ে ব্যবসায়ীরা হয়েছেন নিঃস্ব আর কর্মচারীরা কর্মহীন। এর আগে ফুলবাড়িয়ায় মার্কেট ভস্মীভূত হয়েছে। পুরান ঢাকায় বেশ কিছু ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। ঢাকার বাইরে সীতাকুণ্ডে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তবে ঢাকায় সাম্প্রতিক সময়ে ছোট-বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অধিক ঘটছে। এই নিয়ে জনমনে রহস্য রয়েছে, তবে তা প্রমাণিত নয়। তবে বাস্তবতা হলো, ঢাকার অনেক মার্কেট অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুনের ঘটনার পর ঢাকার অন্য মার্কেটের অগ্নিঝুঁকির বিষয়টি সামনে এসেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার বিষয়ে নতুন করে কাজ শুরুর কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। প্রকাশ, ঢাকার প্রায় ৪৫০টি মার্কেট ও শপিংমল আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব মার্কেট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার নোটিশ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। একাধিকবার পরিদর্শনেও গেছে তারা। বারবার সতর্ক করা হয়েছে দ্রুতই মার্কেট সরিয়ে নিতে। বলা হয়েছে, আগুন নির্বাপণের যথেষ্ট ব্যবস্থা করতে। কিন্তু তারা কোনো বিষয় আমলে নেয়নি বলে জানা যায়। এমনকি যে বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনা ঘটল, সেখানেও ৪ বার নোটিশ দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মার্কেট কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি। এ অবস্থায় অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা সহসা নিরোধ হবে- এমন আশা করা যায় না।

আগুনের ঝুঁকিতে থাকা মার্কেটগুলোর যে তালিকা রয়েছে, সেখানে বেশ কিছু ব্যস্ত ও জনপ্রিয় মার্কেটও রয়েছে। যেমন গাউসিয়া, চাঁদনীচক, নীলক্ষেতের বইয়ের দোকান, টিকাটুলির জুতার মার্কেট, মৌচাক মার্কেট, বঙ্গবাজার মাজার রোডের কাপড়ের মার্কেট ও রাজধানী সুপার মার্কেট, শাঁখারীবাজারের দুই সড়কের পাশের মার্কেট। আগুনের ঝুঁকির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মার্কেটগুলোতে আগুন নির্বাপণের ব্যবস্থা নেই, আলো-বাতাসের স্বল্পতা, বিদ্যুতের তারের ছড়াছড়ি ও সরু গলি। সেই মার্কেটগুলোতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের পর্যাপ্ত সড়ক নেই। হঠাৎ আগুন লাগলে বা দুর্ঘটনা ঘটলে অনেক মানুষ বের হওয়ার কোনো পথ নেই। এ ছাড়াও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালে ঢাকার বহুতল ভবন, শিল্প-কলকারখানা, অন্যান্যসহ ১ হাজার ১৬২টি ভবন পরিদর্শন করে। এর মধ্যে ৪৯৯টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আর অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ১৩৬টি ভবনকে নোটিশ দেয়। সূত্র জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত মার্কেটগুলো অতি পুরোনো। আগুন লাগলে আশপাশে কোনো জলাশয় নেই, যেখান থেকে পানি এনে আগুন নেভানো যাবে। এ ছাড়াও অনেক মার্কেট রাজউকের নকশা অনুযায়ী করা হয়নি। প্রশ্ন হলো, ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো এরপরও কীভাবে চলছে? তথ্য অনুযায়ী, ফায়ার সার্ভিসের কাজ হচ্ছে শুধু নোটিশ দেয়া। সিলগালা করার কাজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তাহলে তো বলা যায়, অগ্নিকাণ্ডের দায় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না।

রাজধানীবাসী নানা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এখানে নাগরিক নিরাপত্তা তলানিতে ঠেকেছে, এমন উক্তি করলে অত্যুক্তি হবে না। নিয়ম অনুযায়ী, সব মার্কেট ও শপিংমলে আগুন নেভানোর জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনা থাকার কথা। এমনতি আগুন নেভানো পানি থাকার কথা। কয়েকটি মার্কেটের এমন ব্যবস্থা রয়েছে? আর ঢাকা নগরীতে জলাশয় যেভাবে ভরাট হচ্ছে, তা ভবিষ্যতে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি করতে পারে। সংগত কারণেই জলাশয় পুনরুদ্ধার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরেকটি বিষয়, শুধু নোটিশ দিলেই হবে না, ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট বন্ধ ও সংস্কারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আগুনের লেলিহান শিখায় মানুষের স্বপ্ন ভস্ম হতে দেয়া যাবে না।