রমজানে খাদ্যাভ্যাসে আনতে হবে পরিবর্তন

মহিমা ইসলাম রিমি

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সংযমের মাস রমজান। শুধু আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ নয়, বরং জীবনের সামগ্রিক ক্ষেত্রে উন্নতি ও কল্যাণ সাধনই এ মাসের উদ্দেশ্য। রমজানে অন্যান্য সব ক্ষেত্রে আমরা সংযম আনলেও ঠিক উল্টো কাজ করি খাদ্য গ্রহণে। এ সময় আমাদের স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসে এবং ভুল খাবার গ্রহণ করে আমরা অনেক সময় অসুস্থ হয়ে যাই।

আমাদের দেশে বহুকাল থেকেই প্রচলিত হয়ে আসছে ইফতারে ভাজাপোড়া খাবার। বলা যায়, এক ধরনের ঐতিহ্য হিসেবেই এটি পালিত হচ্ছে বছরের পর বছর। পূর্বপুরুষদের অনুসরণে ভাজাপোড়া খাবার খেয়েই ধারাবাহিকতা মেনে ঐতিহ্য রক্ষা করে এক ক্ষুরে মাথা মুড়াচ্ছেন উত্তরসূরিরা। কিন্তু এতে যে নিজের স্বাস্থ্যের ওপর নিজেরাই ঘুঘু চরাচ্ছেন তাতে কারোর বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই।

সেজন্য রমজান মাসে আমাদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে বিশেষ সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ইফতারিতে তেলে ডুবানো বিভিন্ন ভাজাপোড়া খাবার, কোমল পানীয়, দোকান থেকে কেনা প্রিজারভেটিভযুক্ত রং দেয়া বিভিন্ন জুস আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাবার গ্রহণের ফলে মাথাব্যথা, পেটে জ্বালাপোড়া, আলসার, হজমের সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘসময় ধরে না খেয়ে থাকতে হয় বিধায় ইফতারে এমন খাবার শরীরের জন্য জুলুম বৈকি!

সাহরিতে তেল-চর্বি ও মসলাযুক্ত মাংস খাওয়া অনুচিত। কারণ গরু কিংবা খাসির মাংস ২-৩ দিন হজমে সময় নেয়ায় শরীরকে দুর্বল করে, ডিহাইড্রেশন তৈরি করে তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয়। সেজন্য কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। এটি শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। আঁশ জাতীয় খাবার ছাড়াও খেজুর, দই, চিড়া, দুধ, কলা শরীরের পরিপাকতন্ত্রকে সচল রাখতে সাহায্য করে।

সাহরির সময় অধিক পানি না খেয়ে বরং ইফতারি থেকে সাহরি পর্যন্ত অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। ইফতারিতে বাসায় তৈরি বিভিন্ন ফলের শরবত বানানোর অভ্যাস করলে ভালো। ইফতারের উপর নির্ভর করে রাতের খাবার নির্বাচন করা উচিত। যথাযথ স্বাস্থ্যজ্ঞান থাকা সত্ত্বেও ইফতারে ভাজাপোড়া খায় না এমন মানুষ আমাদের দেশে পাওয়া দুষ্কর। বরং দেখা যায়, ভাজাপোড়া খাবার অন্য সময়ের চেয়ে রমজান মাসে বেশি খাওয়া হয়। এমনকি দেখা যায়, রমজানে রোজা রেখে গৃহিণীর অধিক সময় ব্যয় হয় ইফতারের খাবারের এলাহি আয়োজন করতেই।

কাজেই এখন থেকেই আমাদের মনোভাব বদলানো জরুরি। সংযমের মাসে খাদ্যাভ্যাসেও আমাদের সংযমী হতে হবে। স্বাস্থ্যজ্ঞান মেনে খাবার গ্রহণ করতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে। রমজানে শখের বশে গ্রহণ করা ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন করতে পারলেই সুস্থ দেহে সুন্দর মন নিশ্চিত করাও কুমিরের সন্নিপাত হবে না।

শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]