ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ব্রয়লার মুরগি কতটুকু নিরাপদ?

জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় নিশ্চিত করতে হবে
ব্রয়লার মুরগি কতটুকু নিরাপদ?

সুলভ ও সাশ্রয়ী হওয়ায় ব্রয়লার মুরগি সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বলা যায়, অনেক মানুষের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ব্যাপক চাহিদার কারণে একে ঘিরে পোলট্রি শিল্প বিস্তার লাভ করেছে। বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে ব্রয়লার মুরগির মাংস কতটুকু নিরাপদ- এ নিয়ে একটি প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে। বছরের শুরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক ব্রয়লার মাংস নিরাপদ বলে নিশ্চিত করেছিলেন। সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ব্রয়লার মুরগির হাড়-মাংসে অতিমাত্রায় ভারী ধাতু রয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) এ গবেষণায় বলা হয়, মানবদেহে সহনীয় মাত্রার চেয়ে ১২৮ গুণ বেশি নিকেলের উপস্থিতি পাওয়া গেছে ব্রয়লার মুরগির মাংসে। সেই সঙ্গে ক্যাডমিয়াম, লেড-সিসা ও ক্রোমিয়ামেরও আধিক্য রয়েছে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। উল্লেখ্য, বেশি মাত্রায় ভারী ধাতু ক্রমাগত গ্রহণ করলে ভারী ধাতুগুলো আমাদের পরিপাকতন্ত্রে আক্রমণ করে। এটা ক্রমান্বয়ে গ্রহণের ফলে পরিপাকতন্ত্রের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে পাকস্থলীর ক্যান্সার, অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার, কোলন ও লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। আমাদের দেহের ত্বকের নিচে ধাতুগুলো জমা হয়ে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া ভারী ধাতুর প্রভাবে গর্ভের সন্তান নষ্ট হতে পারে বা বিকলাঙ্গ সন্তান জন্ম দিতে পারে। লিভারেও খাদ্যবিপাকে সমস্যা হতে পারে। সংগত কারণেই এ বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি।

স্মর্তব্য, ‘অ্যাসেসমেন্ট অব হেভি মেটালস ইন ব্রয়লার চিকেন অ্যান্ড ইটস সোর্স ট্রাকিং ইন খুলনা সিটি করপোরেশন এরিয়া’ শিরোনামের ওই গবেষণাপত্রে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংসে ভারী ধাতু নিকেল রয়েছে ১২৮ মিলিগ্রাম, ক্রোমিয়াম ১২ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম, ক্যাডমিয়াম শূন্য দশমিক ১৯ মিলিগ্রাম, লেড বা সিসা ১৮ দশমিক ৫১ মিলিগ্রাম ও আর্সেনিক রয়েছে শূন্য দশমিক ৪৩ মিলিগ্রাম, যা জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) থেকে ব্রয়লার মুরগির মাংস বা হাড়ে এসব ভারী ধাতুর যে সহনীয় মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে তার চেয়ে বেশি। গবেষকরা আরও বলছেন, তারা বাজারে পাওয়া যায় এমন ১৫টি কোম্পানির ব্রয়লার ফিড (খাদ্য) সংগ্রহ করেছিলেন, ল্যাবে পরীক্ষা করে তাতে অনুমোদিত মাত্রার থেকে বেশি মাত্রায় ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। মূলত ব্রয়লার ফিড থেকে ব্রয়লার মুরগির দেহে ভারী ধাতু প্রবেশ করছে। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগিকে সাধারণ নলকূপের পানি খাওয়ানো হয়, সেই পানিতে আর্সেনিক থাকায় মুরগির দেহে আর্সেনিক প্রবেশ করছে। আরও জানা যায়, অপেক্ষাকৃত ছোট খামার থেকে পাওয়া মুরগিতে বেশি পরিমাণে ভারী ধাতু পাওয়া গেছে। এর কারণ হচ্ছে, তারা অধিক মুনাফার আশায় বাজারে পাওয়া কম দামের ফিড কিনে মুরগিকে খাওয়ায়। গবেষণার এলাকা খুলনা সিটি হলেও অন্য এলাকায় ব্রয়লার মুরগি নিরাপদ এ দাবি করা যাবে কি?

উল্লেখ্য, মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ও উদ্যোগে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল গবেষণার ভিত্তিতে কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ব্রয়লার মুরগির মাংস একটি নিরাপদ খাদ্য এবং ব্রয়লার মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্যের জন্য কোনো ঝুঁকি নেই। অথচ সাম্প্রতিক গবেষণাটি বলছে, তা ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। দেশে দেশে ব্রয়লার মুরগি প্রতিষ্ঠিত একটি খাত। দেশে যে পরিমাণ খামার ও অবকাঠামো রয়েছে, তার পুরোপুরি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন আরও বহুগুণে বৃদ্ধি করা সম্ভব। রপ্তানির হাতছানিও রয়েছে। তাই ব্রয়লার মুরগি ঝুঁকিমুক্ত হতে হবে। এ বিষয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত