বাজারে নকল ও ভেজাল দুধ

হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

পবিত্র রমজান মাস ঘিরে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ভোক্তা ঠকানোর ফাঁদ পেতে বসে। বিশেষ করে রমজানে চাহিদা আছে এমন পণ্যকে টার্গেট করে নকল ও ভেজাল করা হয়। যেমন এবার অভিনব পন্থায় ভেজাল দুধ বানিয়ে বাজারজাতকরণের তথ্য পাওয়া গেছে। আটা, চিনি, খাবার সোডা, লবণ, সয়াবিন তেল ও কৃত্রিম সুগন্ধি মিশিয়ে তৈরি হয় কথিত দুধ। স্মর্তব্য, পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে দেশে তরল দুধের চাহিদা বাড়লেও বাড়েনি উৎপাদন। বিশেষ করে দুগ্ধশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু খ্যাত শাহজাদপুরসহ পাবনা-সিরাজগঞ্জে উৎপাদিত গরুর তরল দুধের চাহিদা সারা দেশে বহুলাংশে বেড়েছে। সে অনুপাতে বাড়েনি উৎপাদন। বাঘাবাড়ী মিল্কশেড এরিয়ায় উৎপাদিত তরল দুধ দেশের মোট চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। চাহিদার তুলনায় প্রতিদিন ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রায় দেড় লাখ লিটার। আর এ ঘাটতি পূরণের সুযোগে একশ্রেণির মুনাফালোভী অসাধু দুধ ব্যবসায়ী, মধ্যস্বত্বভোগী ও ঘোষ সম্প্রদায় বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে ভেজাল ও নকল দুধ তৈরি করে বাড়তি চাহিদা অনুযায়ী ঢাকাসহ সারা দেশে সরবরাহের করছে এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতি মণ ছানার পানিতে আধা কেজি ননি, আধা কেজি স্কিম মিল্ক পাউডার, সামান্য পরিমাণ লবণ, খাবার সোডা, এক কেজি চিনি ও দুধের কৃত্রিম সুগন্ধি (এসেন্স) মিশিয়ে কথিত দুধ তৈরি করা হচ্ছে, যা রাসায়নিক পরীক্ষা ছাড়া আসল, না নকল তা নির্ণয় করা সম্ভব নয়।

তথ্য অনুযায়ী, শাহজাদপুর উপজেলার ঘোষ সম্প্রদায় ও দুধ ব্যবসায়ীদের শতাধিক কারখানায় প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ লিটার দুধের ছানা তৈরি হয়। এসব কারখানায় অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক অটোমেটিক মেশিনের মাধ্যমে নিমেষেই দুধ থেকে শতভাগ ননি (ফ্যাট) বের করে নেয়া হয়। পরে ওই ননিবিহীন দুধ জ্বাল দিয়ে তাতে ময়দা মিশিয়ে নিম্নমানের ছানা তৈরি করে তা উৎকৃষ্ট ও খাঁটি ছানা হিসেবে বেশি দামে বিক্রি করে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। আবার এসব কারখানায় অসাধু ব্যবসায়ীরা ননিবিহীন টানা দুধে চিনি, সয়াবিন তেল, জ্বাল দেয়া তরল আটা ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশিয়ে দুধের কৃত্রিম ঘনত্ব প্রস্তুত করে বিভিন্ন বেসরকারি ডেইরি প্রজেক্টের কুলিং সেন্টারের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সহযোগিতায় লিটারপ্রতি কমিশন বাণিজ্যের ভিত্তিতে শতভাগ ননিবিহীন ভেজাল দুধকে ননিযুক্ত শতভাগ খাঁটি দুধের দামেই বিক্রির মাধ্যমে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু চক্র। আর কতিপয় অসাধু ঘোষ ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এ ভেজাল ও নকল দুধ সংগ্রহ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা লিটারপ্রতি কমিশন নিয়ে খাঁটি দুধ হিসেবে বেসরকারি দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে ঢুকিয়ে দিতে সহযোগিতা করছে। আর তা বেশি দামে কিনে অজান্তেই ভোক্তারা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। এভাবে কিছু লোক লাভবান হলেও হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য।

স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের মতে, কেমিক্যাল মিশ্রিত তরল দুধ দীর্ঘদিন পান করলে মানবদেহে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। ফরমালিন মেশানোর ফলে হেপাটোটক্সিকিটি বা লিভার রোগ, কিডনি রোগ, ক্ষতিকর মিল্ক পাউডারের ফলে মানবদেহে হাড়ের মধ্যকার দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে শরীরের পেছনের অংশে ব্যথা অনুভব, চর্মরোগ, হজমে সমস্যা, পেটের পীড়াসহ নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সংগত কারণেই ভেজাল ও নকল দুধ বাজারজাতকরণ পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। অসাধু চক্রকে প্রতিহত করতে অনতিবিলম্বে নিয়মিত তদারকি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রকৃত গো-খামারিদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।