ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বুড়িগঙ্গা দূষণে সরকারি সংস্থা

আরও দায়িত্বশীল হতে হবে
বুড়িগঙ্গা দূষণে সরকারি সংস্থা

নদী দূষণকারীর উৎসের তালিকায় বেসরকারি সংস্থার নাম থাকে, এটা দেখে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে এক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাগুলোর সংস্রব কম নয়। অন্ততপক্ষে ঢাকার লাইফলাইন বুড়িগঙ্গা দূষণে সরকারি সংস্থার দায় মাত্রাতিরিক্ত বলে স্পষ্ট হয়েছে। আমাদের স্মরণে রয়েছে যে, দখল-দূষণে বিপর্যস্ত বুড়িগঙ্গায় প্রাণবৈচিত্র্য ও স্বচ্ছ পানি ফিরিয়ে আনতে ২০১৭ সালে হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে নেয়া হয় ট্যানারি শিল্প। এর পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে একাধিক প্রকল্প নিয়েও ঢাকার এ প্রধান নদীটিকে দূষণমুক্ত চেষ্টা করা হয়। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উল্টো সরকারি সংস্থাগুলোই বুড়িগঙ্গা দূষণের সঙ্গে বেশি জড়িত বলে প্রমাণ মিলেছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সমীক্ষার তথ্যমতে, বুড়িগঙ্গা নদীর ঢাকা অংশে ৯৫টি দূষণের উৎস চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দূষণের উৎসই ৫৯টি। পরিবেশবিদরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বুড়িগঙ্গায় শিল্পদূষণ কমলেও সরকারি সংস্থার মাধ্যমে দূষণের মাত্রা অনেক বেড়েছে। সংগত কারণেই সিটি করপোরেশনের বা ওয়াসার মাধ্যমে ঢাকার চারপাশের নদনদী দূষণ দ্রুত বন্ধের দাবি করছেন তারা। এটা সংস্থা দুটির দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে।

উল্লেখ্য, একটা সময় বুড়িগঙ্গা দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হতো হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্পকে। শিল্পটি স্থানান্তরে সে দূষণ এখন কমেছে। বুড়িগঙ্গার জীববৈচিত্র্যের জন্য এটা অনেক বড় অর্জন। কিন্তু বুড়িগঙ্গা দূষণের তালিকায় এখন ঢাকা ওয়াসা ও ডিএসসিসির নাম বড় করে উঠে আসা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উদ্যোগে দেশের ৪৮টি প্রধান নদনদীর ওপর ৫ বছর ধরে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। গত ডিসেম্বরে এ সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে প্রতিবেদন। সমীক্ষায় পাওয়া তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর সমীক্ষা পরিচালনা করেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। ওই সমীক্ষায় বুড়িগঙ্গা নদীতে সরকারি সংস্থার দূষণের বিষয়টি লক্ষ্য করেন। প্রধানত সিটি করপোরেশনের স্লুইসগেট, খাল ও ড্রেনের পানি সরাসরি নদীতে পড়ে বুড়িগঙ্গা দূষিত করছে বলে জানা গেছে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি থেকেও সরাসরি বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বারবার নদীদূষণকারী ব্যক্তি ও সংস্থাকে সতর্ক করা হচ্ছে। চিঠি দেয়া অব্যাহত রয়েছে। সমীক্ষা প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগেও তারা বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদ-নদীর দূষণ নিয়ে কথা বলেছে। এবার সমীক্ষাটি প্রকাশ হওয়ার পর আরও সুনির্দিষ্টভাবে দূষণকারী ব্যক্তি ও সংস্থাকে অবহিত করে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারবে বলে আশা করছে। আমরাও সেই প্রত্যাশায় থাকলাম।

সরকারি সংস্থা যদি দুষণের কারণ হয় সেটা খুবই বেদনাদায়ক। এর ফলে বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দূষণে জড়িয়ে পড়তে দ্বিধাবোধ করে না। আর দূষণের তালিকায় যদি সরকারি সংস্থার নাম থাকে, তাহলে শুধু তাদের সক্ষমতা নিয়েই প্রশ্ন তোলা যথেষ্ট নয়, বরং সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তোলার উঠবে। সংগত কারণেই সরকারি সংস্থাগুলো দূষণ নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। যেখানে দেশের আদালত নদীকে জীবন্ত সত্তা বলে ঘোষণা করেছে, সেখানে দেশের সরকারি সংস্থা নদী বা জলাশয় দূষণের মতো কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে- তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়। এক্ষেত্রে তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশিত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত