আজকের কিশোর-কিশোরীরাই আগামী দিনের দেশের নেতৃত্বে আসীন হবে। কেউ রাজনীতিকের ভূমিকায়, কেউবা সরকারি কর্মকর্তা, কেউবা সমাজসেবক হবে- এটি একটি অনিবার্য ঘটনা। আর এজন্য তাদের বেড়ে ওঠায় যথাযথ প্রস্তুতি যেমন নিতে হবে, তেমনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। এ অবস্থায় আমাদের কিশোর-কিশোরীরা কীভাবে বেড়ে উঠছে তা জানার আগ্রহের বিষয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ কিশোর-কিশোরীর মধ্যে বিষণ্ণতার মতো ভয়ানক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে। দেশের অর্ধেকের বেশি কিশোর-কিশোরীর জীবনযাত্রার মান খারাপ। এর মধ্যে আবার ৫ শতাংশের জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত নিম্ন। এছাড়া দেশের লবণাক্ত এলাকার মানুষের ৬১ শতাংশই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। অনেকের রক্তে মাত্রাতিরিক্ত শর্করা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গবেষণায় দেশে জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির এমন চিত্র উঠে এসেছে। শনিবার এক অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত একাধিক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে কৈশোরকালীন জীবনমান; বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার অসংক্রামক রোগ ও ঝুঁকিগুলো; যেমন খাদ্য, তেমন স্বাস্থ্য; চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষায় বিষয় বাছাইয়ের প্রবণতা ও প্রভাবিত হওয়ার কারণগুলো এবং কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। ফলাফল আমাদের বলা যায় অস্বস্তিই বাড়িয়ে তোলে।
উল্লেখ্য, গবেষণায় স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জীবনযাত্রার ভালো মানের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে- সন্তানের প্রতি পিতামাতার ভালো আচরণ, কিশোর-কিশোরীদের ভালো মানসিক অবস্থা এবং তাদের সমস্যা মোকাবিলা করার সক্ষমতা। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ৫২ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত জীবনযাত্রার মান স্বাভাবিক মানের থেকে কম, এর মধ্যে ৫ শতাংশের জীবনমান অনেক খারাপ। দেখা গেছে, মূলত যাদের ভাই-বোন বেশি, যাদের বাড়িতে খাদ্য নিরাপত্তা কম, যারা বিষণ্ণতা, উদ্বিগ্নতা এবং মানসিক চাপে ভুগছে তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জীবনযাত্রার মান খারাপ। স্বাস্থ্যঝুঁকির ক্ষেত্রে খাদ্য একটি বড় কারণ। গবেষণায় বলা হয়, পাউরুটি, কোমল পানীয়, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই এবং আচার পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এগুলোতে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে এমন উপাদান রয়েছে। যেমন- এসব খাবারে রয়েছে অতিরিক্ত লবণ, ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক, লেড, ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড। আর বলাবাহুল্য, এসব মুখরোচক খাবার কিশোর-কিশোরীরা অধিক পরিমাণে গ্রহণ করে থাকে, যা তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে সহজেই অন্তর্ভুক্ত করছে। তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ২২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী। তাদের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য কৈশরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কিন্তু সেটা কতটুকু করা গেছে, তা দেখার বিষয়। অবশ্য গবেষণায় বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসাদের বেশিরভাগ কিশোরী। অর্থাৎ কিশোররা এখানে পিছিয়ে রয়েছে।
কিশোর-কিশোরীদের বড় একটি অংশের জীবনমান খারাপ থাকা অবশ্যই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অবশ্যই কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত-জীবনযাত্রার মানন্নোয়ন করতে হবে এবং এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নীতিমালা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সংগত কারণেই স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এবং তা যথাযথ ব্যবস্থাপনা একটি জরুরি বিষয়। এ নিয়ে সরকার আরও সচেতন হবে- এটাই প্রত্যাশা। পাশাপাশি গবেষণার ফলাফল ও পর্যবেক্ষণ সরকার আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করা যায়।