ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের গৌরবময় অধ্যায়
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। আমাদের স্বাধিকার সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এ দিনটি ব্যাপক তাৎপর্যমমণ্ডিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য এক দিন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই দিন মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এ বৈদ্যনাথতলাকেই মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়। মুজিবনগর সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বস্তুত এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রত্যাশিত দিকনির্দেশনা, সাংবিধানিক এবং যৌক্তিক অধিকার রক্ষার জন্য মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। দিনটি বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য গৌরবগাথার স্বাক্ষর বহন করে। উল্লখ্য, ১৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সরকারের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। তার অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। স্মর্তব্য, সেদিন শপথ অনুষ্ঠানে পাঠ করা হয় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র।

মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মূলত এই সরকারের নেতৃত্বেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলে। এটা স্পষ্ট যে, মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য জনগণের নির্বাচিত সংসদের নেতৃত্বে একটি সাংবিধানিক সরকার বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করে। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং দেশ ও বিদেশে এ যুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা ও সমর্থন আদায় করার ক্ষেত্রে এ সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সরকার গঠনের পর থেকে অগণিত মানুষ দেশকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যে অনিবার্য, যৌক্তিক ও বৈধতার দাবি রাখে, মুজিবনগর সরকার গঠনের ফলে দেশে তো বটেই, আন্তর্জাতিক মহলেও এ বাস্তবতা সুদৃঢ় হয়। এক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে মুজিবনগরে ঘোষিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ভূমিকা গুরুত্ববহ। অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ ও সুলিখিত ভাষায় লিখিত এ ঘোষণাপত্র মুজিবনগর সরকার পরিচালনায় অন্তর্র্বর্তীকালীন সংবিধান হিসেবে কার্যকর ছিল। সেখানে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করার কথা বলা হয়। এই সরকারের অধীনেই এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

মুজিবনগর সরকার গঠন এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র মুক্তি সংগ্রামকে সাংগঠনিকভাবে বেগবান করার পাশাপাশি স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে ত্বরান্বিত করে। একটি গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্য থেকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এক অনন্য কীর্তি। পৃথিবীর সব মুক্তিপ্রয়াসী জনগোষ্ঠীর জন্য এটা নিঃসন্দেহে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। আমাদের স্বাধীনতার প্রাপ্তি অনেক, তবে অপূর্ণতা নেহাত কম নয়। স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে নানা দিক থেকেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিপুল অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক নানা সূচকেও পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বজায় রাখতে হবে। মুজিবনগর সরকারের চেতনা এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মর্মবাণী উপলব্ধি করা তাই আমাদের জন্য অপরিহার্য। আর এ জন্য প্রতিটি স্তরে আমাদের সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধারণ করতে হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য দূর করতে হবে। তবেই আমরা সৃষ্টিশীল দেশ গঠনে সফল হবো।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত