ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জলবসন্তে মৃত্যু ও আক্রান্ত বাড়ছে

জরুরি ওষুধের ব্যবস্থা করুন
জলবসন্তে মৃত্যু ও আক্রান্ত বাড়ছে

মাত্রাতিরিক্ত গরমে আপদ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে জলবসন্ত রোগ। অতিসংক্রামক রোগ জলবসন্ত (চিকেন পক্স) মূলত গরমের শুরুতে দ্রুত সংক্রমিত হয়। বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি। কখনও কখনও প্রাণঘাতী রূপও ধারণ করে এ রোগ। প্রকাশ, সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে জলবসন্তে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। একই সঙ্গে মারাও যাচ্ছেন অনেক রোগী। এদিকে ভাইরাস ও রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাস (ভিজেডভি) থেকে সৃষ্ট জলবসন্ত অত্যন্ত সংক্রামক ও ছোঁয়াচে রোগ। মূলত গরম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে অস্বস্তিকর পরিবেশ বা শুকনো আবহাওয়া থাকে তাতে এ রোগের সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। যেকোনো বয়সের মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তবে শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি। এ রোগ প্রাণঘাতীও হতে পারে। আর এ ভাইরাস সাধারণত শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়। ভাইরাসটি রক্তে গিয়ে সারা শরীরে চামড়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং চুলকানি ও ফোসকার সৃষ্টি করে। মানুষের শরীরেই এ ভাইরাসের জন্ম এবং মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে। একটা সময় জলবসন্তের ওষুধ ছিল না। এখন ওষুধ রয়েছে, টিকাও রয়েছে। তবে পরিতাপের বিষয়, হাসপাতালে নেই ওষুধের মজুত।

রোগটি বাড়ছে, তবে কেন্দ্রীয়ভাবে রোগটির গতিপ্রকৃতি, আক্রান্ত ও মৃত্যুর বিষয় যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে না বলে জানা যায়। এ অবস্থায় ভাইরাস ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। সঠিকভাবে গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করা না হলে ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে রোগটি। তবে চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশের কোথায় কতজন অতিসংক্রামক রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে ও মারা গেছে, তার হিসাব কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারের কাছে নেই। প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিষয়টিতে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ শাখা। স্মর্তব্য, রাজধানীর ‘সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল’ সংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। সরকারের এ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি বছর দেড় শতাধিক জলবসন্তের রোগী ভর্তি হয়েছে। আর মারা গেছে আটজন। এটা রোগটির তীব্রতা বিষয়ে একটি পার্শ্বচিত্র মাত্র, প্রকৃত অবস্থা জানা দরকার। উপরোক্ত হাসপাতালের সূত্রে জানা যায়, বেশিরভাগ রোগীকে ঢাকার বাইরের জেলাগুলো থেকে এ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। ভর্তি রোগীর প্রতি ১০ জনের আটজনই শিশু। এর মধ্যে নবজাতকও রয়েছে। এই থেকে রোগীর প্রকৃতি সম্পর্কে আমরা ধারণা নিতে পারি। সংগত কারণেই এ রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

জলবসন্ত রোগটির চিকিৎসার এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। তথ্য অনুযায়ী, জলবসন্ত-পরবর্তী নিউমোনিয়া ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগ রয়েছে তাদের জন্য জলবসন্ত প্রাণঘাতী হতে পারে। এ অবস্থায় রোগটি বিস্তার ঘটার আগেই প্রতিরোধ করা দরকার। আর যারা জলবসন্তে আক্রান্ত হবে তারা যেন শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে যান, সেই সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আর সরকারি হাসপাতালে সুলভে যাতে ওষুধ পাওয়া যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালেও সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসা নেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত