ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কৃষক অস্বস্তিতে

সারের দাম বৃদ্ধি নয়
কৃষক অস্বস্তিতে

দফায় দফায় সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষক পড়েছেন বিপাকে। জ্বালানি তেলের পর দুই দফা সারের দাম বাড়ানোয় চরম হতাশায় তারা। কৃষি উপকরণসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় কোনো কোনো ফসলে উৎপাদন খরচ উঠে আসা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। বেশি সমস্যায় বর্গাচাষিরা। কৃষকরা বলছেন, বর্তমানে মাঠে রয়েছে ভুট্টা, পেঁয়াজ, মুগ, পাট, তিল, বাদাম, মরিচসহ বিভিন্ন সবজি। এসব ফসলে সারের প্রয়োজন। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি একেবারে কম হয়। এতে সেচে ব্যয় বেড়েছে। এর পর রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট। এ অবস্থায় সারের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই কাম্য নয়। সবকিছু মিলে এবার কৃষি উৎপাদনে খরচ বাড়বে। এতে কৃষকদের একটি অংশ জমি আবাদ কমানোর কথা ভাবছে। এদিকে অর্থনীতিবিদ ও কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী মৌসুমে চালসহ কৃষিপণ্য এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পপণ্যের দাম বাড়বে। ১০ এপ্রিল ডিলার ও কৃষক পর্যায়ে সারের দাম কেজিতে আরও ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে একজন কৃষককে প্রতি কেজি ইউরিয়া কিনতে হবে ২৭ টাকায়, ডিএপি ২১, টিএসপি ২৭ এবং এমওপি ২০ টাকা। এর আগে গত বছরের ২ আগস্ট ইউরিয়া সার কেজিতে ৬ টাকা বাড়িয়ে ২২ টাকা করা হয়েছিল। এ হিসাবে ৮ মাসের ব্যবধানে কেজিতে বাড়ানো হয়েছে ১১ টাকা। শতকরা হিসাবে যা ৬৯ শতাংশ।

দেশে যে কোনো পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে অজুহাত হিসেবে দেখানো হয়। বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কথাও বলা হয়। অথচ এমন এক সময় সারের দাম বাড়ানো হলো, যখন বিশ্ববাজারে দাম কমেছে। প্রকাশ, আলোচ্য সময়ে বিশ্ববাজারে সারের দাম ৪৭ শতাংশ কমেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রতি টন ইউরিয়া সারের দাম ছিল ৬৭৮ মার্কিন ডলার। এ বছরের মার্চে তা কমে ৩১৩ ডলারে নেমে এসেছে। সারের দাম বৃদ্ধিসংক্রান্ত সরকারি সার্কুলারেই বলা হয়েছে, গত আগস্টে সরকারকে প্রতি কেজি ইউরিয়া সার কিনতে হতো ৮১ টাকায়। আর সর্বশেষ সার্কুলারে বলা হয়, প্রতি কেজি ইউরিয়া সার সরকারকে ৪৮ টাকায় কিনতে হয়। বিশ্ববাজারে দাম কমায় স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশে কমার কথা। কিন্তু দেশে উল্টো দাম বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নিয়েছে সরকার। এই ঋণের ক্ষেত্রে ভর্তুকি কমানোর শর্ত দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। সারের দাম বাড়ানোর এটি অন্যতম কারণ। বিষয়টি দুঃখজনকই বলতে হবে। বলাই বাহুল্য, হঠাৎ সারের দাম বাড়ানোয় কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সংশ্লিষ্টদের মতে, গত বছর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি একেবারে কম হয়েছে। এতে সেচের ব্যয় বেড়েছে। এর পর রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট। এতে কৃষি উৎপাদনের খরচ বাড়বে। কৃষকদের একটি অংশ জমি আবাদ কমানোর কথা বলছে। অর্থনীতিবিদ ও কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী মৌসুমে চালসহ কৃষিপণ্য এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পপণ্যের দাম বাড়বে। অর্থাৎ সমস্যা আরও তীব্রতর হবে।

সরকার দেশের আবাদযোগ্য সব জমিতে উৎপাদন নিশ্চিতে তাগিদ দিচ্ছে। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ও খাদ্যঘাটতির শঙ্কার মধ্যে এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। তবে এক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই কৃষি উপকরণের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রয়োজনে কৃষিতে ভর্তুকি অগ্রাধিকার রাখতে হবে। কৃষিতে ভর্তুকি দিলে প্রকারন্তরে দেশ লাভবান হয়। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন জায়গায়য় বিশৃঙ্খলা চলছে বলে জানা যায়। অভিযোগ, ডিলারদের একটি অংশ সরকারিভাবে নির্ধারিত মূল্য মানছেন না। তারা ইচ্ছামতো দামে সার বিক্রি করেন। তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। সার, সেচ ও জ্বালানিসহ সব কৃষি উপকরণ কৃষকের ক্রয়মূল্যের মধ্যে রাখতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত