অভিমত

অর্থনীতিতে রমজান এবং ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব

ইয়াসিন হোসেন, শিক্ষার্থী, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতিবছর ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ইফতার এবং ঈদের কেনাকাটার অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইফতার এবং ঈদ বাজারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এক মাস রোজা রাখার পরে ঈদুল ফিতর পালিত হয়। যেহেতু বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ, সেহেতু বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ রোজা এবং ঈদ পালন করে। এজন্য রোজার মাসকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে ইফতার এবং ঈদ বাণিজ্যের সূচনা হয়, যেটি আমাদের খুচরা বাজার অর্থনীতিকে বেশ প্রভাবিত করে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর একটি প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের GDP-তে খুচরা বাণিজ্য খাতের অবদান ১২.৪ শতাংশ যার সিংহভাগ আসে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা ইফতার এবং ঈদের কেনাকাটার বাজার থেকে। আর আমাদের দেশে প্রতিবছরই ইফতার বাণিজ্যের বৃদ্ধির হার ৭.৮ শতাংশ যা বাংলাদেশের GDP -তে বেশ অবদান রেখে চলেছে।

প্রতি বছর রমজান মাস এবং ঈদ উপলক্ষ্যে কর্মজীবী মানুষরা বেতন, ঈদ ভাতাসহ অন্যান্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। যার ফলে তাদের ব্যয় বৃদ্ধি পায় এবং এ ব্যয় করার প্রবণতা প্রতিবছর বেড়েই চলেছে। এ মাসে মানুষরা তাদের সঞ্চয় থেকেও খরচ করে থাকেন, ফলে অর্থনৈতিক সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বগতি হয়, যা কার্যত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অবদান রাখে। The business standard-এর এক তথ্যমতে প্রতি বছর ঈদ এবং রমজান উপলক্ষ্যে সব মিলিয়ে প্রায় ৭ লাখ কোটি টাকা লেনদেন হয়, ফলে রমজানকেন্দ্রিক এক নতুন অর্থনীতির উদ্ভব ঘটে। শুধু ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে দেশে জাকাত অর্থনীতি, ইফতার অর্থনীতি এবং ঈদ অর্থনীতির সূচনা হয়। এজন্য শুধু এ মাসেই আমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখতে পাই।

বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ট্রেড এসোসিয়েশন এর তথ্য মতে রমজানকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহরের মোট ৪ লাখ ৫০ হাজার স্থায়ী রেস্টুরেন্ট এবং ২ লক্ষ্যেও অধিক অস্থায়ী দোকানে ইফতার সামগ্রী বিক্রি করা হয়। এ দোকানগুলোতে পুরো মাসব্যাপী মোট প্রায় ১৭ কোটি টাকার ইফতার বিক্রি হয়। যার সিংহভাগ বিক্রি হয় ঢাকার চকবাজারে। ১৭ কোটির এই জনপদে ৮৮ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। ফলশ্রুতিতে প্রায় ১২ কোটি মানুষ প্রতিদিন রোজা ভাঙার জন্য ইফতারের আয়োজন করে থাকেন। এর মধ্যে যদি জন প্রতি প্রতিদিন আনুমানিক ইফতার বাবদ গড় ৫০ টাকা করে ব্যয় করে থাকে, তাহলে ১২ কোটি মানুষের প্রতিদিনের ইফতার বাবদ ব্যয় হবে ৬০০ কোটি টাকা। যা মাসিক গড় করলে হয় ১৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

শুধু প্রস্তুতকৃত ইফতার সামগ্রী চাহিদা নয়, এই মাসের নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্য যেমন: ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল ইত্যাদি পণ্যের চাহিদাও আকাশচুম্বি হয়ে থাকে। এ মাসে সাধারণের তুলনায় এইসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে নতুন জামা, পাঞ্জাবি-টুপি এবং জুতার চাহিদা ও বৃদ্ধি পায় বহুগুণে। ঈদুল ফিতরে আমাদের দেশে সব মিলিয়ে ৭০ হাজার কোটি টাকার কাপড়ের বাণিজ্য হয়। এছাড়াও এ মাসে জুতা, কসমেটিক সামগ্রী, হোম অ্যাপ্লাইন্স ইত্যাদির চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

সার্বিক দিক বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া যায়, যে দেশে রমজান শুধু ধর্মীয় দিক থেকে নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই অর্থনৈতিক এ প্রবৃদ্ধি অর্জন যেন দেশের উন্নয়নে আরও ভূমিকা রাখতে পারে, তাই প্রশাসনের প্রয়োজন নিয়মিত ঈদ এবং ইফতার বাজারে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা।