লোডশেডিং

নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ জরুরি

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

একদিকে রমজান, অন্যদিকে গরমের উত্তাপ। বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। তবে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা সাপেক্ষে চাহিদা কম থাকলেও পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং চলছেই। ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকটা নির্বিঘ্ন থাকলেও ঢাকার বাইরে ভয়াবহ লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানা যায়। প্রকাশ, বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ডের মধ্যেও দেশজুড়ে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। ফলে অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। দিনে-রাতে সব সময়ই বিদ্যুৎ যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে দিনে-রাতে ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টারও বেশি লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। অনেক গ্রামে রাতে বিদ্যুৎ আসেই না। এ অবস্থায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে গ্রামে। কোনো কোনো গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎকেন্দ্রের অফিসেও হামলা হচ্ছে। আবার কোথাও সড়ক অবরোধের কথাও শোনা যায়। লোডশেডিংয়ের কারণে অনেক শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। শিল্পমালিকরা বলেছেন, একবার কারখানা বন্ধ হলে পুরো কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যায়। নতুন করে ফ্যাক্টরি চালু করতে আরও ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগে। এ অবস্থায় ঈদের আগে ব্যবসা-বাণিজ্য চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, কোনাবাড়ী, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ এলাকার পোশাকসহ অন্যান্য কারখানায় উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিল্প মালিকরা জানিয়েছেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে দিনের অধিকাংশ সময় কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সময়মতো বিদেশে পণ্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রপ্তানি অর্ডার বাতিলের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট। সোমবার বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৫ হাজার মেগাওয়াট। সেটাও উৎপাদন সম্ভব হয়নি। তথ্য অনুযায়ী, ১৩ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৩০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এর মাধ্যমে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে বাংলাদেশ। কিন্তু এর পরও গরমের কারণে বিদ্যুতের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গরম বেড়ে যাওয়ায় এসি ও ফ্যান বেশি চলছে। পাশাপাশি রমজান ও সেচ মৌসুম চলার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা একলাফে অনেক বেড়েছে। উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশি হওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। উল্লেখ্য, বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বমূল্যের কারণে গত বছর সরকার গ্যাস ও তেল আমদানি কমিয়ে দেয়। ফলে ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং করে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অবশ্য বলেছেন, বিদ্যুতের অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। পাশাপাশি তিনি জ্বালানি সংকটের কথাও বলেছেন, যার ফলে এখন আর বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ এখানে ঘুরেফিরে ডলার সংকটের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। এ অবস্থায় শিল্প উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটছে আর ঢাকার বাইরে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। আর বিদ্যুতের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম। অনেক এলাকায় সেচ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে ধানের ফলনে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি পোলট্রিসহ বিভিন্ন শিল্প গড়ে উঠেছে বিদ্যুৎকে কেন্দ্র করে। এ অবস্থায় কৃষক ও খামারিরা অসহায় বোধ করা স্বাভাবিক।

বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েও লোডশেডিং ঘটছে- এটা একটি দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা। জনজীবন এবং উৎপাদনের সঙ্গে বিদ্যুৎ এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে, এর অভাব বড় ধরনের সংকটের দিকে নিয়ে যাবে। সংগত কারণেই এ নিয়ে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে সক্ষমতা দেশে রয়েছে, তা কার্যকর করা গেলে দেশে লোডশেডিং থাকার কথা নয়। তাই সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে যে সফলতা দেখিয়েছি, এখন উৎপাদন সক্ষমতার দিকে মনোযোগী হতে হবে। সক্ষমতার সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।