ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অভিমত

ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম, শিক্ষক ও কলামিস্ট
ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক

প্রতি বছরের মতো এবারও পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনা শেষে আমাদের দ্বারে এসেছে ‘পবিত্র ঈদুল ফিতর’। এবার পবিত্র এই মাসের বেশিরভাগ অংশ সহনীয় আবহাওয়ায় কেটেছে। যদিও শেষের দিকে সারাদেশেই রেকর্ড তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এর পরও পবিত্র রমজানের দিনগুলো আল্লাহর অশেষ রহমতে শেষ হয়।

‘ঈদ’ শব্দটি আরবি, যার অর্থ আনন্দ। ‘ফিতর’ শব্দটিও আরবি, যার অর্থ রোজা ভাঙা। ঈদুল ফিতরের অর্থ রোজা শেষ হওয়ার আনন্দ, আল্লাহর নেয়ামত লাভ করার আনন্দ। হিজরি সনের দশম মাস তথা শাওয়াল মাসের ১ তারিখ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়।

ইসলামে ঈদের প্রবর্তন হয়েছে দ্বিতীয় হিজরির মাঝামাঝি সময়ে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) যখন মদিনায় আসেন, তখন দেখেন যে সেখানকার লোকেরা বছরে দুই দিন (নাইরোজ ও মিহরজান) আনন্দ করে, খেলাধুলা করে। তিনি বললেন, আল্লাহতায়ালা তোমাদের এই দুই দিনের পরিবর্তে আরো অধিক উত্তম ও কল্যাণকর দুটি দিন দিয়েছেন। ১. ঈদুল আজহা। ২. ঈদুল ফিতর। (আবু দাউদ : ১/১৬১)।

খুশির আমেজ নিয়েই পালিত হয় পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদে ছেলেবুড়ো সবাই মেতে উঠবে মহাআনন্দে। বিশেষ করে ছোটদের আনন্দ হবে দেখার মতো। এদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর সবচেয়ে বড় উৎসব। এই উৎসব গোটা দেশেই বিরাট প্রভাব ফেলে, যা অন্য কোনো সময় দেখা যায় না। সরকারি, বেসরকারি অফিস, আদালত, শিক্ষাঙ্গন, কলকারখানাসহ দেশের সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে কয়েক দিন। শহরের মানুষ ঈদ করতে গ্রামে ফেরে নাড়ির টানে। লাখো মানুষের ঈদযাত্রার কোলাহলে মুখরিত থাকে দেশের সব বাস, ট্রেন, লঞ্চ স্টেশন। শহরগুলো হয়ে পড়ে জনশূন্য। পথঘাট ফাঁকা পেয়ে মুক্ত হাওয়ায় ঘুরে বেড়ান ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। উধাও হয়ে যায় চিরচেনা যানজট। চেনাশহর অচেনা মনে হয়!

বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। গ্রামে ফিরে শহরের মানুষ নিজের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদ করতে পেরে আত্মতৃপ্তি লাভ করে। প্রত্যেকের ঘরে ঈদ খুশির বার্তা নিয়ে?আসে প্রতিবছর। বিশ্বব্যাপী নানা সংকট, ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও ঈদ বয়ে?নিয়ে?আসে খুশি আর আনন্দ। এদিন মানুষ বিগত দিনের সব দুঃখ, কষ্টকে ভুলে থাকতে চায়। চায় পারস্পরিক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হতে। সমস্যাগ্রস্ত থাকার পরও মানুষ ঈদ উৎসবকে উদযাপন করতে সচেষ্ট থাকে। ব্যতিক্রম শুধু গরিব ও অসহায় মানুষদের ক্ষেত্রে। তাদের মাঝে ঈদের খুশি তেমন প্রভাব ফেলে না। ঈদের এদিনও তাদের অনেককে হয়তো কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে পরিবারের সবার মুখে একটু আহার তুলে দিতে। পথশিশু কিংবা অভাবী পরিবারের সদস্যদের ঈদের নতুন জামা কেনার সাধ্যটুকুও থাকে না। তাছাড়া আর্থিক সংগতিটুকুই বা কই! তার ওপর এবার দ্রব্যমূল্য ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। যে কারণে, মানুষ নিত্যপণ্য ক্রয় করতে হিমশিম খেয়েছে। পরিপূর্ণ ঈদ উদযাপনে এটি একটি বাধা ছিল বলা যায়। যাক, এর পরও এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে ঈদ পালনে মানুষ নিজের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় যতটুকু পেরেছে সাধ্যমতো করেছে।

আমাদের মাঝে যারা বিত্তবান ও আর্থিকভাবে সচ্ছল তাদের উচিত গরিব, অসহায় মানুষের দুঃখ কষ্টগুলো ভাগাভাগি করা, সাহায্য সহযোগিতা করা। অনেকেই তো আছেন যারা নানাভাবে অর্থ ও খাদ্যের অপচয় করেন।

অথচ অপচয় না করে সেসব অর্থ বা খাদ্য গরিব মানুষগুলোর মাঝে যদি এই ঈদের সময় বিলিয়ে দিই তাহলে তারাও সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারবে। সঠিক নিয়মে যদি গরিব ও অসহায় মানুষের প্রাপ্য হক ‘জাকাত’ আদায় করা যেত তাহলেও সংকটের অনেকটা সমাধান হয়ে যেত। সমন্বয়হীনতার কারণে পর্যাপ্ত ও সঠিকভাবে প্রাপ্য হকদারদের মাঝে বণ্টন না হওয়ায় জাকাত প্রদানের উদ্দেশ্যটাই ফলপ্রসূ হয় না। সরকার চাইলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জাকাত আদায় করে তা অসচ্ছল ও অসহায়দের মাঝে পৌঁছে দিতে পারেন। জাকাতের এই অর্থ পেয়ে তারাও ঈদের আনন্দ পেতে পারে। আমরা চাই ঈদের দিনে সব মানুষ আনন্দ ভাগাভাগি করুক। এ ব্যাপারে আমাদের সবার সচেতন হওয়া উচিত। এমনিতে পবিত্র রমজানের দিনগুলোতে যত সাহায্য-সহযোগিতা, আর্থিক সহায়তা প্রদান করা যাবে, ততই কল্যাণ। কয়েকগুণ সওয়াব আমলনামায় যোগ হবে। সওয়াবও হবে। অন্যদিকে অভুক্ত ও কষ্টে পতিত মানুষগুলো একটু সুখের পরশ পাবে। তাদের আনন্দ দেখলে মনটাই ভরে যাবে। ঈদ আমাদেরকে এ শিক্ষাটাই দিয়ে?থাকে। ‘একজন মানুষ ও ঈদের এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে না’- এমন পরিবেশ আমাদের গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি এসব মানুষের দরিদ্রতা নিরসন এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করি। দরিদ্রতার হার যতই কমবে, ঈদের আনন্দে শামিল হওয়া মানুষের সংখ্যাও তত বাড়বে। প্রতি ঈদে আমাদের উদারতা ও সেবার মানসিকতা বাড়ানো উচিত বলে মনে করি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত