কৃষিপণ্যের রপ্তানি

বাণিজ্যিক কূটনীতি বাড়াতে হবে

প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

করোনা সংক্রমণকাল পেরিয়ে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের সামনে খাদ্য সংকটের মতো সংবেদনশীল বিষয়টি সামনে তুলে এনেছে। দেখা যাচ্ছে, খাদ্যের জোগান থাকা সত্ত্বেও সাপ্লাই চেইনের সমস্যার কারণে খাদ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন খাদ্যের জন্য হাহাকার বাড়ছে, তেমনি খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে হু-হু করে। এ অবস্থায় দেশে দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি যেমন তাগিদ বাড়ছে, একইভাবে খাদ্য তথা কৃষিপণ্য রপ্তানির ওপরও জোর বাড়ছে। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের জন্য এটা অধিক প্রাসঙ্গিক বলেই ধরে নেয়া যায়। আশার কথা, সরকারের তরফে এ বিষয়টির ওপর জোর দেয়া হয়েছে। দেশে কৃষিপণ্যের উৎপাদনের সঙ্গে রপ্তানির পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে। তবে কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে বলে জানা যায়। প্রকাশ, এবার কৃষিপণ্যের রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য থাকলেও গত ৯ মাসে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৬৮৭ মিলিয়ন ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩২.৩৭ শতাংশ কম বলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য থেকে জানা গেছে। কৃষিপণ্যের রপ্তানিকারকরা বলছেন, কৃষিপণ্যের রপ্তানি ঝুড়ির একটা বড় অংশজুড়ে থাকত সুগন্ধি চাল। ওই চালের রপ্তানি গত জুলাই থেকে পুরোপুরি বন্ধ আছে। স্থানীয় চালের বাজারের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার সুগন্ধি চালের রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এর প্রভাব পড়েছে রপ্তানি আয়ে, পাশাপাশি এই পণ্যটি বাজার হারানোর শঙ্কার মধ্যেও রয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, শুধু সুগন্ধি চালই নয়, সামগ্রিকভাবে কৃষিপণ্যের রপ্তানিই কমেছে। ইপিবির তথ্য বলছে, কৃষিপণ্যের রপ্তানির মধ্যে সুগন্ধি চাল, সবজি, মসলা, ড্রাই ফুড, তামাকসহ বিভিন্ন পণ্য উল্লেখযোগ্য। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) এসব পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৯৫৮ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু এই রপ্তানি চলতি অর্থবছরের একই সময়ে নেমে এসেছে ৬৮৭ মিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ ৯ মাসে রপ্তানি ২৮.৩১ শতাংশ কমেছে। তবে কৃষিপণ্যের তালিকায় থাকা মসলা ও তামাকের রপ্তানি বাড়লেও ড্রাই ফুড, ফল, সবজির রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমেছে। এদিকে রপ্তানিকারকরা বলছেন, কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বাড়তি ফ্রেইট চার্জ একটা বড় বাধা। এর কারণে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে পণ্যের খরচ বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানির বাজারে হোঁচট খাচ্ছে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্টরা জানান, ফ্রেইট চার্জের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের দাম ২০-৩০ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে। এটি একটি বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। উল্লেখ্য, করোনা এবং করোনা-পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে যখন সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ে, তখন ফ্রেইট চার্জ বাড়ানো হয়। তবে প্রতিবেশী দেশগুলোতে এই চার্জ যৌক্তিক পর্যায়ে থাকলেও বাংলাদেশে সেটা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কার্গো স্পেস না পাওয়া, সমন্বিতভাবে কাজ না করা কৃষিপণ্যকে রপ্তানিতে পিছিয়ে দিচ্ছে বলে জানা যায়।

শিল্পায়নের বিস্তার ঘটলেও এখনও দেশের অর্থনীতির প্রাণ কৃষি। ভৌগোলিক ও সংস্কৃতিগত দিক বিবেচনায় নির্দ্বিধায় বলা যায়, এখানে কৃষির গুরুত্ব কখনও কমবে না। সংগত কারণেই কৃষিভিত্তিক উৎপাদনে আরও মনোযোগী হতে হবে। খাদ্যে টেকসই স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি কৃষিপণ্য রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণ করতে হবে। সেটা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। খাদ্য রপ্তানি বাড়লে কৃষক পাবেন পণ্যের ন্যায্য দাম, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারও সমৃদ্ধ হবে। এ জন্য অবশ্যই কৃষিপণ্য রপ্তানির বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো অপসারণ করতে হবে। অভ্যন্তরীণ বাধাগুলো চিহ্নিত করে দূর করতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক কূটনীতি জোরদারের মাধ্যমে সুবিধা আদায় করে নিতে হবে।