ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পোলট্রি খাতে মাৎস্যন্যায়

ছোট খামারিকে বাঁচাতে হবে
পোলট্রি খাতে মাৎস্যন্যায়

পোলট্রি খাত শুধু সাধারণ ভোক্তাকে সাশ্রয়ী মূল্যে আমিষের জোগান দিচ্ছে না, অধিকন্তু বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিয়েছে। বিশেষ করে গ্রামবাংলার প্রান্তিক পর্যায়ে ছোট ছোট অসংখ্য খামার গড়ে উঠেছে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিকেও করেছে বেগবান। তৈরি করেছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এখানে সাম্প্রতিক সময়ে সিন্ডিকেটের কালো হাত পড়েছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের পোলট্রি খাত। প্রকাশ, কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সম্ভাবনাময় খাতটি। ফলে প্রতিনিয়ত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে খামার। ছোট ব্যবসায়ীদের চুক্তিভিত্তিক খামারে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে জানা যায়। কারসাজির মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে করপোরেট চক্রটি। উল্লেখ্য, মুরগির খাবার, ওষুধ ও বাচ্চা উৎপাদনের জন্য বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভরশীল খামারিরা। কিন্তু এসব কিছুর দাম বৃদ্ধি করে খামারিদের উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। চুক্তিভিত্তিক খামারে বাধ্য করতে প্রান্তিক পর্যায়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি করে দিয়ে নিজেরা কম খরচে উৎপাদন করে নিজেদের মতো মূল্যবৃদ্ধি করে দেয়। এমনকি মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে আড়তদার ও খামারিদের দামও ঠিক করে দেয় তারা। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন খামারিরা। আর অনিবার্যভাবেই এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভোক্তারা।

তথ্য অনুযায়ী, দেশে ডিম-মুরগির মোট উৎপাদনের ৮০ শতাংশই হয় ক্ষুদ্র খামারিদের মাধ্যমে। অথচ মাত্র ২০ শতাংশ উৎপাদন করেই পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠান। তারা চুক্তিভিত্তিক ফার্মগুলোকে ৩৫-৪৫ টাকায় বাচ্চা দেয়, আর সাধারণ খামারিদের কিনতে হয় ৮০-৯০ টাকায়। মুরগির খাদ্য এবং ওষুধে কম দাম রাখাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে। এভাবে প্রান্তিক খামার থেকে এখন যে মুরগি বাজারে আসছে তার উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। কিন্তু কোম্পানির উৎপাদন খরচ আগের থেকে অনেক কম। অথচ দাম বৃদ্ধি করে বেশি লাভ করছে তারাই। আর খামারিরা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। এরকম যথেচ্ছাচার প্রশাসনের সামনে কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ১ বছরে প্রায় ৪০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানা যায়। পরিতাপের বিষয়, এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরাসরি জড়িত প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের যোগসাজশে সিন্ডিকেটকারীরা ভোক্তা ও খামারিদের জিম্মি করে মুরগির দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে একদিকে যেমন ছোট খামারিরা পথে বসছে, অন্যদিকে ক্রয়ক্ষমতা হারাচ্ছে সাধারণ ভোক্তারা। বিষয়টি কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।

পোলট্রি খাতে মাৎস্যন্যায় পরিস্থিতি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ডিম-মুরগির বাজারে অনৈতিক হস্তক্ষেপ কিছুতেই বরদাস্ত করা যাবে না। প্রান্তিক খামারিদের অধিকার নিশ্চিত ও পণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে হবে। এটা তখনই সম্ভব যখন গুটিকয়েক করপোরেট কোম্পানির লাগাম টানা সম্ভব হবে। পোলট্রি শিল্পের এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিরসনে অবশ্যই দক্ষ সাপ্লাই চেইন গড়ে তুলতে হবে, যা বিগত ৩০ বছরেও সম্ভব হয়নি। ডিম বা ব্রয়লার উৎপাদনের সব দরকারি পণ্যের দাম নির্ধারণ খামারিদের ভূমিকা থাকতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংস্থাগুলোর সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কারিগরদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজার প্রতিযোগিতার পরিপন্থি কোনো কাজ করা যাবে না। ছোট খামারিদের অবশ্যই সমর্থন জোগাতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত