ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য, ভোগান্তির সীমা নেই

মাহমুদুল হক আনসারী, সংগঠক গবেষক কলামিস্ট, [email protected]
পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য, ভোগান্তির সীমা নেই

পরিবহন সেক্টরে সমস্যার শেষ নেই। বাংলাদেশের জনগণের ঈদের সময় বাড়ি যাওয়া, কর্মস্থলে ফেরত আসার সময় এ দৃশ্য জনগণকে বারবার ভাবিয়ে তুলছে। এদেশের জনগণের ঈদ, পূজা, মেলা আসলে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকদের যাত্রীদের প্রতি অন্যায়-জুলুমের শেষ থাকে না। জনগণ বিশেষ সময়, দিনে জন্মস্থান বাড়ি যাবে, নিজে যাবে, পরিবার আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে নেবে। নিজে গাঁ গ্রাম পরিবেশ ঘুরে ফিরে দেখবে, বাংলাদেশ দেখবে। দেশের পর্যটন অঞ্চল ঘুরবে। বাংলাদেশের সৌন্দর্য, পরিবেশ, প্রকৃতি দেখবে। প্রকৃতির ছোঁয়া গ্রহণ করবে। মানুষের হাসি-কান্না-আনন্দ ভালোবাসা দেখবে উপভোগ করবে।

তাই মানুষকে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে হবে। যাওয়ার জন্য রাস্তাঘাটের যা প্রয়োজন তা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চল এলাকার রাস্তাঘাটের ব্যাপকভাবে পরিবর্তন হয়েছে। শহর, গ্রাম উন্নয়নে চেহারা পাল্টে গেছে। পরিবহন সেক্টরে গাড়ির কোনো অভাব নেই। ভিন্ন ভিন্ন জাতের গণপরিবহন রাস্তায় চলাচল করছে। রিকশা, অটোরিকশা, ট্যাক্সি, সিএনজি নানা নামের কোম্পানির দামি দামি বাস, কোস্টার দূরপাল্লার গণপরিবহন, উপজেলাভিত্তিক, জেলাভিত্তিক, গণপরিবহনের কোম্পানি মালিকের শেষ নেই। নানা রঙ্গ নাম দিয়ে প্রতিদিন মালিকপক্ষ রাস্তায় নামাচ্ছে গণপরিবহন। কাউন্টার রয়েছে তাদের। চট্টগ্রাম, ঢাকা, সায়েদাবাদ, গাবতলী সারাদেশের বিভিন্ন জেলা শহর ও উপশহরে সবগুলো গণপরিবহনের কাউন্টার আছে। চট্টগ্রাম, ঢাকা থেকে কলকাতার যাত্রীদের বাস পাওয়া যায়। গণপরিবহনের শেষ নেই। যাত্রীও আছে। সবগুলো গণপরিবহন সুন্দরভাবে পরিবহন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কোম্পানি বাড়ছে, গণপরিবহন বাড়ছে। রাস্তায় গণপরিবহনের শেষ নেই। দেশের সব শহরে উপজেলায় প্রায় গণপরিবহনে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। রাস্তার সঙ্গে গণপরিবহন বেড়েছে। কিন্তু পরিবহনে সেবা বাড়েনি। শ্রমিক-মালিকদের আচার ব্যবহারে উন্নতি হয়নি। যাত্রীদের সঙ্গে শ্রমিকদের ব্যবহার দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। অনেকগুলো গণপরিবহনের নির্দিষ্ট কাউন্টার নেই। তারা রাস্তায় যাত্রীদের টানাটানি করে। ভালো গাড়ি ভালো সিটের কথা বলে জোর করে গাড়িতে তুলে নেই। নেয়ার পর দেখা যায়, সীটগুলো মোটেও ভালো না।

বাংলাদেশের গণপরিবহন সেক্টর দুর্নীতি আর ভোগান্তির কারখানা। অব্যবস্থাপনা, অনিয়মভাবে ইচ্ছে মতো চলে। গাড়ির কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করলে বেশিরভাগ গাড়ির ফিটনেস ডকুমেন্ট পাওয়া যাবে না। ড্রাইভার, হেলপার গাড়ির কোনো বৈধ ডকুমেন্ট নেই। তারা পরিবহন সেক্টরে দাপটের সঙ্গে রাস্তায় চলাচল করছে। ট্রাফিক পুলিশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করছে। দূরপাল্লার এসব গাড়ির বৈধ কাজগপত্র তল্লাশি করতে তেমন দেখা যায় না, বেশিরভাগ সময় পরিবহনের যাত্রীদের শরীর ব্যাগ তল্লাশি করে। অবৈধ কিছু তল্লাশির মাধ্যমে খোঁজার চেষ্টা করে যাত্রীর বিরুদ্ধে অভিযান তল্লাশি সারা দেশেই চোখে পড়ার মতো দেখা যায়। তবে গণপরিবহনে ড্রাইভার, শ্রমিক-মালিক পক্ষের অনিয়ম অব্যবস্থাপনা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। সিটের বাইরে যাত্রী উঠা। যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী নেয়ার অনিয়মের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা রহস্যজনকভাবে নিরবতা দেখা যায়। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কর্মকাণ্ড এখন গণপরিবহনে দেখা যায় না। গাড়ির সিটের মান, যাত্রীর সুযোগ-সুবিধা, যাত্রীর সঙ্গে ব্যবহার, ন্যায্য ভাড়ার তালিকা, ভাড়া আদায় এসব বিষয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিআরটিএ নির্দিষ্টভাবে অভিযোগ ছাড়া কোনো গণপরিবহনে তল্লাশির মাধ্যমে যাত্রীর বৈধ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। ফলে দেশব্যাপী গণপরিবহন যাত্রীদের শান্তির চেয়ে যন্ত্রণা বেশি। কথার সঙ্গে কোনো মিল গণপরিবহনে পাওয়া যায় না। ঈদের সময় দেশের সবগুলো রোটে ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার অভিযোগ আছে। ঘরমুখী ও কর্মমুখী জনগণকে তো গাড়িতে চড়তেই হবে। পরিবহন ছাড়া কোথাও যাওয়া আসা মোটেও সম্ভব নয়। এ সুযোগে যাত্রীর পকেট কথা, অতিরিক্ত যাত্রী তুলা, লক্কর-ঝক্কর গাড়ি রং দিয়ে ফিটনেসবিহীনভাবে টোকেন স্লিপে রাস্তায় চলে। হাজার হাজার পরিবহন, ড্রাইভার টোকেন স্লিপে তাদের পরিবহন বাণিজ্য পরিচালনা করছে। একটি অনিয়ম আর জনভোগান্তিতে পরিপূর্ণ এ পরিবহন এবং গণপরিবহন। পত্রিকার সম্পাদকীয় উপসম্পাদকীয় বহু রিপোর্ট লেখালেখি হলও বাস্তবে এ সেক্টরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যারা কর্তৃপক্ষ রয়েছে জনগণের পক্ষে তাদের কোনো কার্যকর ভূমিকা চোখে পড়ার মতো নেই। জনগণ পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অত্যাচারের শাস্তি মাথায় রেখে রাস্তায় চলাচল করছে।

চট্টগ্রামের গণপরিবহন ভাড়া অনেক বেশি। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় চট্টগ্রাম, খাগড়ছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার রোডে ভাড়া বেশি আদায় করা হয়। চট্টগ্রাম, বাঁশখালী, মহেশখালী রোডে বাংলাদেশের যেকোনো এলাকার চেয়ে অধিক ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে সরকারের বেশ কয়েকটি উন্নয়ন শিল্প প্রজেক্ট চলমান। কক্সবাজার পর্যটনশিল্প, সারা দেশে থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এ সব অঞ্চলে ভ্রমণে আসে।

এস আলমসহ আরও কয়েকটি মালিক পরিবহন দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বাঁশখালী, মহেশখালী, মগনামা, কুতুবদিয়া রোডে গণপরিবহন চালু করেছে। এ পরিবহনগুলোর ভাড়া বাংলাদেশের যেকেনো এলাকার চেয়ে বেশি। এলাকার দূরত্ব, কিলোমিটার হিসাব করলে ভাড়া তালিকার সঙ্গে মোটেও যৌক্তিক মিল পাওয়া যায় না। সিএনজি চালিত এসব গণপরিবহন রাস্তায় চললে ও ভাড়া আদায় করছে তেলের চেয়ে বেশি। যাত্রীদের বাগ্বিতণ্ডা আয়োজক কেউই আমলে নেয় না।

চট্টগ্রাম বাঁশখালী মহেশখালী, কুতুবদিয়া এখন অনেক কাছাকাছি সংযুক্ত রাস্তা, ফলে এ রোডের যাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে সুযোগে মালিক পক্ষ ভাড়ার সংখ্যা বাড়িয়েছে। দুই তিন গুণ ভাড়া বৃদ্ধি আদায় করছে। সড়ক-পরিবহন। বিআরটিএ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃপক্ষ তাদের অনৈরাজ্য অত্যাচার থেকে এ অঞ্চলের যাত্রীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি আদায়ের পক্ষে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। সারা দেশের গণপরিবহনের যাত্রীদের প্রতি অতিরিক্ত ভাড়ার অত্যাচার হতে মুক্তি চাই। ড্রাইভার-হেলপারদের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে। ফিটনেসবিহীন গণপরিবহন রাস্তায় চলাচল বন্ধ করতে হবে। চেকপোস্টের নামে কৌশলে কৌশলে নিরীহ যাত্রীদের পুলিশি হয়রানি অমানবিকভাবে একটি তল্লাশির নামে চরম ভোগান্তি।

রাস্তায় অনিয়ম সব ধরনের অন্যায় হয়রানি এবং যাত্রী ভোগান্তির কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। যাত্রীদের অধিকার আদায় ও পর্যবেক্ষণ কর্মকাণ্ড প্রক্রিয়া আরও সক্রিয়ভাবে দেখতে চাই। যে ধরনের পরিবহন সেক্টর হবে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় বন্ধ করতে হবে। সব মিলিয়ে মালিক, শ্রমিক আইনশৃঙ্খলা, বাহিনী এবং যাত্রীদের সার্বিক সেবা প্রতিষ্ঠায় বাস্তব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হোক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত