ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাঠ্যবইয়ে ভুলের সংশোধনী

দ্রুত সম্পাদন করা হোক
পাঠ্যবইয়ে ভুলের সংশোধনী

এবারের নতুন পাঠ্যপুস্তকে বিশেষ করে নতুন শিক্ষাক্রমের বইয়ে এমন কিছু দৃষ্টিগ্রাহ্য ভুলের সমাহার ঘটে, যা জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার করে। সচেতন মহলে ও অভিভাবকের মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সরকার অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে ভুলের সংশোধনে ব্রতী হলেও অদ্যাবধি তার ফল পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় শিক্ষাবর্ষের প্রায় ৪ মাস পেরিয়ে বিপাকে পড়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে ঈদের ছুটি। ছুটি শেষেই শুরু হবে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা। পরীক্ষা দরজায় কড়া নাড়লেও এখনো বই নিয়ে কাটেনি দ্বিধা। তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন বইয়ে একাধিক সংশোধনী দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে এপ্রিলের শেষে এসেও মেলেনি এই সংশোধনী। ফলে শিক্ষকরা পড়াতে গিয়ে জটিলতায় পড়ছেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও বইয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। শিক্ষার্থীরা ভুল তথ্য আছে ভেবে পড়তে চাইছে না। তাদের ভাবনা, বইয়ে ভুল সংশোধনের পরই পড়বে তারা। বিশেষ করে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়া ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অবস্থা আরও খারাপ। তারা রীতিমতো উদ্দেশ্যহীনভাবে অধ্যয়ন চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা কিছুতেই প্রত্যাশিত নয়।

সরকার নতুন শিক্ষাক্রম ও নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করেছে, সময়ের বিবেচনায় তা অবশ্যই ইতিবাচক। তবে ভুল তথ্যে ভরা পাঠ্যবই সরকারের সদিচ্ছা প্রলম্বিত করেছে। এটা যেন করোনাকালের শিক্ষায় দুর্বিপাকের মতো আরেকটি ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বই আছে অথচ নির্দ্বিধায় পড়ানো যাচ্ছে না, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মধ্যে অস্বস্তি থেকেই যাচ্ছে। এটা খুবই যন্ত্রণাকাতর বিষয়। পাশাপাশি নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদানের বিষয়টি অনেক শিক্ষক এখনও আশ্বস্ত করতে পারেনি বলে তথ্য রয়েছে। এ নিয়ে সরকার ৫ দিনের একটি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছিল। তবে সেটি যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয়নি। আবার অনেক শিক্ষক ট্রেনিংও নিতে পারেনি। ফলে এই ট্রেনিং খুব কাজে দিয়েছে- এমন দাবি করা যাবে না। দেখা যাচ্ছে বিষয়টা এমন শিক্ষকরা নিজেরাই সঠিকভাবে বুঝতে পারছে না, কিন্তু তাদেরই নিয়মিতভাবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করতে হচ্ছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে পাঠ্যপুস্তকের ভুলের বিষয়টি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য, পাঠ্যবইয়ে ভুলের কারণে এরই মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’। পাঠ্যবইয়ে ভুল বের করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গঠন করা হয়েছিল তদন্ত কমিটি। এ কমিটির রিপোর্টে উঠে আসে বইয়ের যাচ্ছেতাই অবস্থা। তারা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির চার বইয়ে ৫৮টি অসংগতিসহ ১৮৮টি ভুল বের করে। অথচ এ বইয়ের সংশোধনী এখনও পৌঁছাইনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে।

জানা যায়, ভুল সংশোধনীর তিনটি প্রক্রিয়া নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রথমত, শিক্ষকরা ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সামনে ভুল দেখিয়ে দেবেন তা শিক্ষার্থীরা সংশোধন করবে। দ্বিতীয়ত, ভুল থাকা অংশটুকু ছোট কাগজে ছাপিয়ে বইয়ে ভুল অংশে লাগিয়ে দেয়া হবে। আর তৃতীয়ত, পুরো বই, নির্দিষ্ট অধ্যায় ছাপিয়ে দেয়া হবে শিক্ষার্থীদের হাতে। এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, বইয়ে মৌখিকভাবে যে সংশোধনী শিক্ষকরা দেবেন, তা সদ্য পাঠানো হয়েছে মাউশিতে। এগুলো শিগগির পাঠানো হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। অর্থাৎ ভুল সংশোধনের প্রথম ধাপটি সম্পন্ন হওয়ার পথে। মন্দের ভালো হিসাবে এটা দ্রুত সম্পন্ন হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরবে। স্মর্তব্য, এরই মধ্যে পাঠ্যপুস্তকের ভুলের খেসারত শিক্ষার্থীদের দিতে হয়েছে, ভবিষ্যতে এ নিয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। আর ভুলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতাও এড়িয়ে গেলে চলবে না, তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত