আপনাদের ভাবনা

বেকারত্ব এক অভিশাপ

সাকিবুল হাছান

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ইংরেজি আন-অ্যামপ্লেয়মেন্ট (Un-employment) শব্দটি থেকে বেকারত্ব শব্দটি এসেছে। একজন মানুষ যখন তার পেশা হিসেবে কাজ খুঁজে পায় না, তখন যে পরিস্থিতির হয়, তাকে বেকারত্ব বলে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অভিশাপ হচ্ছে বেকারত্ব। দিন দিন ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে বেকারত্বের সংখ্যা, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দাসহ বিভিন্ন কারণে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না।

গত নভেম্বর মাসে দেশের বেকারত্বের হার ৬.৯১ শতাংশে পৌঁছায়। অর্থাৎ, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উচ্চ হলেও তা তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য চাকরি তৈরি করার মতো যথেষ্ট হয়নি। ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুলাইয়ে দেশের বেকারত্বের হার ছিল ৬.৪৭ শতাংশ।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার।

তারা বেকারত্বের অসহ্য যন্ত্রণায় জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। ফলে দেশে সর্বত্র দেখা দিচ্ছে বিশৃঙ্খলা। ক্রমবর্ধমান এ সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে অর্থনৈতিক অবকাঠামো যে কোনো সময় ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়বে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বেকারত্বের হার বাংলাদেশেই বেশি। কিন্তু এ শিক্ষিত তরুণরা দেশের বোঝা নয়, মূলত দেশের সম্পদ! বেকার নারী-পুরুষ কাজের অনুসন্ধান করছেন, কিন্তু তারা পাচ্ছেন না।

বাবা-মা ছেলে বা মেয়েটির পথ চেয়ে বসে থাকে, কখন তারা পড়াশোনা শেষ করে পরিবারে সচ্ছলতা আনবে, তাদের মুখে হাসি ফোটাবে। কিন্তু একজন শিক্ষার্থী যখন অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেও চাকরি পায় না, তখন তাদের মধ্যে ডিপ্রেশন আরও বহু গুণ বেড়ে যায়।

কাজের সুযোগ না পেয়ে অনেকে মাদকসহ নেশা জাতীয় নানাবিধ অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। হতাশায় জীবন কাটাচ্ছে। অনেকেই বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ।

গত কয়েকদিন আগে একজন শিক্ষার্থী চলন্ত জাহাজ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে, কারণ সে চাকরি খুঁজেও পাচ্ছে না। এমন অনেক শিক্ষার্থীর তাদের জীবন এভাবেই শেষ করে দিচ্ছে।

একজন বেকারের নীরব যন্ত্রণা কেউ অনুভব করতে পারে না, কেউ বুঝতে চায় না তাদের অনুভূতি। আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সেশনজট, জরাজীর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা ও সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে দিন দিন বেকারত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। ইউনেস্কোর এক গবেষণায়, শিক্ষা হলো দারিদ্র্য বিমোচনের প্রধান শর্ত। কিন্তু আমাদের দেশে যে শিক্ষাব্যবস্থা তা শিক্ষিত জাতির কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণ করতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে কী?

একজন স্নাতক বা স্নাতকোত্তরধারী কিংবা শিক্ষিত তরুণ তার পড়ালেখা শেষে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি করবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশে কাজ না পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী বিদেশ যাচ্ছে, ফলে দেশ মেধাশূন্য হচ্ছে। ২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৫৭টি দেশে প্রায় ৪৯ হাজার শিক্ষার্থী বিদেশগমন করেন। ২০২২ সালে ১১ হাজার শিক্ষার্থী শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু কেন? ইউনেস্কোর তথ্য বলছে, ৭০ হাজার থেকে ৯০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী প্রতি বছর উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে পাড়ি জমায়। প্রতি বছরই উচ্চশিক্ষা নিতে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন মেধাবীরা ফলে নীরবে ‘মেধা পাচার’ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে? কারণ দেশে চাকরির অনিশ্চয়তা, শিক্ষাঙ্গনে আধিপত্যের রাজনীতি, বিদ্যাপীঠে অনুকূল পরিবেশ না থাকা, লেখাপড়ার বৈশ্বিক মানের ঘাটতি। বাংলাদেশে লেখাপড়া করেও বেকার থাকতে হয়। এখানে চাকরির নিশ্চয়তা নেই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ শিক্ষিত বেকার শ্রমবাজারে আসছে।

আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা শেষ হলেও মিলছে না কাজ অথচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেখা যায়, বিদেশ থেকে বেশি বেতন দিয়ে দক্ষকর্মী নিয়োগ দিচ্ছেন। অর্থাৎ আমরা যোগ্য লোকবল তৈরি করতে অপারগ। শিক্ষিত তরুণদের মেধা ও শ্রমশক্তি যদি কাজে লাগানো যায়, তাহলে দেশের অর্থনীতি আরও এগিয়ে যাবে। এতে বেকারত্বের বোঝা লাঘব হবে।

জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে এবং বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত বেকার তরুণ ও তরুণীদের জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে আমাদের তরুণ সমাজকে রক্ষা করার জন্য চাই মাঠপর্যায় থেকেই উদ্যোগ। এছাড়া দেশের তরুণ সমাজকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন সহজ ঋণের ব্যবস্থা করা। তাহলে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

শিক্ষার্থী

ঢাকা কলেজ, ঢাকা