ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দুর্ঘটনার পর অবকাঠামোগত ত্রুটি শনাক্ত হয় কেন?

সিফাত রাব্বানী
দুর্ঘটনার পর অবকাঠামোগত ত্রুটি শনাক্ত হয় কেন?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘দাও ফিরিয়ে অরণ্য, লও এ নগর’। অপরিকল্পিত নগরায়ণের এই ফলাফল মিনিটে মিনিটে টের পাচ্ছি আমরা। নানা জায়গায় অগ্নিকাণ্ড, ভবন ধস, বিস্ফোরণ বেড়েই চলেছে। খালি জায়গায় কিংবা পুকুর ভরাট করে আবাসন গড়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। আগুন লেগে পুড়ে ছারখার হয়ে গেল রাজধানীর বঙ্গবাজারের দোকানগুলো। এটা কি অপরিকল্পিত নগরায়ণের উদাহরণ নয়? কেন এ আগুন নেভানোর জন্য হাতিরঝিল থেকে হেলিকপ্টারে করে পানি আনতে হলো, শহরে কেন পানির উৎসের এত সংকট?

আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের পুকুর না থাকলেই বা কি হতো?

অথচ যথাযথ কর্তৃপক্ষ কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই অবকাঠামোগত ত্রুটির কথা বলে ভবন মালিক, গাড়ির মালিকের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের কাঁধে দায় নিচ্ছে না। এই তো কয়েক দিন আগে গুলিস্থানে বিস্ফোরণের পর ভবন নির্মাণের ত্রুটি শনাক্ত করা হলো, যদি দুর্ঘটনা না ঘটত, তাহলে আজও কর্তৃপক্ষ এ ভবনের তদারকি করত কি-না সন্দেহ রয়েছে। যেই হতাহতের ঘটনা ঘটল, তৎক্ষণাৎ বলা হলো নির্মাণ ত্রুটি, এ যেন একটা সাধারণ বুলি হয়ে গিয়েছে।

আজও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স-এর ডিজি বললেন, ২০১৯ সালের ২ এপ্রিল থেকে ১০ বার নোটিশ দেয়া হয়েছে, ভবনে ত্রুটি রয়েছে। কিন্তু নোটিশ দেয়ার পরই কি দায়িত্ব শেষ?

কেন দোকান বন্ধ না করে এখন দুর্ঘটনার পর এসব কথা বলা হচ্ছে? কেন রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পরও একই কথা বলা হয়েছিল? ইমাদ পরিবহনের বাস দুর্ঘটনার পরই কেন সমস্যা শনাক্ত হলো, আগে কেন সমস্যা শনাক্ত হয় না? বনানীর অগ্নিকাণ্ডেও একই কথা বলা হয়েছিল যে আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। এগুলো কি যথাযথ সময়ে তদারকি করা যায় না?

এখনও বাংলাদেশে হাজারো স্থাপনা ঝুঁকিতে। কিন্তু এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না, যতদিন না সেখানে দুর্ঘটনা ঘটবে। ঢাকার বাংলাবাজার, ইসলামপুর, চকবাজার এলাকায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও ঠিকমত পৌঁছাতে পারবে না, যানজটের কারণে কিংবা সরু রাস্তার কারণে। সেখানে কি আগে থেকেই ফায়ার সার্ভিসের কোনো ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে? কিন্তু পরে দোষ যাবে ভবন মালিকের ঘাড়ে। পুরান ঢাকার একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও নেই আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। যার আশপাশে রয়েছে- কোর্ট, হাসপাতাল, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। এ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর জন্য কতটুকু নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে? আমরা নীলক্ষেত, নিউমার্কেট এলাকাও এড়িয়ে যেতে পারি না। নিউ মার্কেটের ভবনগুলো যে নতুন তা কিন্তু নয়। সেখানেও এখনই সময় নিরাপত্তা জোরদার করা। ভবনে ত্রুটি আছে কি-না আগেই চিহ্নিত করা।

সব সময় এ অবকাঠামোর ওপর দোষ না চাপিয়ে কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলা কি-না এটাও দেখতে হবে। বঙ্গবাজারের ঠিক বিপরীত পাশেই ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর। অথচ আগুন নেভাতে কত সময় লেগে গেল। বিভিন্ন কারণ দেখানো হয়েছে, ঠিক বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম বিদেশের মাটিতে হেরে আসার পর যেমন কারণ দেখায়।

আশা করা হয় পরের বার ভালো করে মোকাবিলা করবে; কিন্তু সেটা আর ঠিকমতো হয় না।

নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর থেকেও ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটকে যোগ দিতে হয়েছে। জানা গেল, অধিকাংশ দোকান চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ এলাকার মানুষের। সেখানেও শোকের মাতম বইছে। আমরা সাধারণ মানুষ শুধু নিরাপত্তা চাই। নাকি তদন্ত কমিটি হবে, রিপোর্ট প্রদান হবে, কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়েই কাজ শেষ? এভাবেই কি চলতে থাকবে? তদারকির অভাব নাকি তদারকির পর প্রশাসন কঠোর হতে পারছে না- এটাই দেখার বিষয়।

বর্তমান সরকার দেশের মানুষের জন্য সব ধরনের উন্নয়নের কথা ভাবলেও কতিপয় ব্যক্তিদের দায়িত্বহীনতার জন্যই এমন সব দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। কাজেই দুর্ঘটনার পর অবকাঠামোর ত্রুটি চিহ্নিত না করে আগেই এই ক্রটি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিন। নয়তো দুর্ঘটনা ক্রমেই বাড়বে।

শিক্ষার্থী

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত