ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বজ্রপাতে মৃত্যু

সচেতনতা ও সতর্কতা জরুরি
বজ্রপাতে মৃত্যু

দেশের ছয় জেলায় বজ্রপাতে গত বৃহস্পতিবারে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দু’জন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় চারজন এবং যশোর, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর ও রাজবাড়ীতে একজন করে মারা গেছেন। বজ্রপাতে এমন মৃত্যুর খবর আরও প্রকাশিত হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে দেশে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত রুদ্র-রুষ্ট বিরূপ প্রকৃতি, উষ্ণতা বৃদ্ধি, উঁচু বৃক্ষনিধনসহ বিবিধ কারণে প্রতি বছর বাড়ছে বজ্রপাত। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। বিশেষ করে, গ্রামের মানুষের কাছে বজ্রপাত এখন ভয়াবহ আতঙ্কের বিষয়। সাধারণত এপ্রিল থেকে মে-জুন পর্যন্ত বজ্রপাতের মৌসুম হিসেবে বিবেচিত। তবে এখন দেখা যায়, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। একজন মৃত্যুর সঙ্গে অন্তত ১০ জন আহত হয়ে থাকে বলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বজ্রপাতে আহতরা স্থায়ীভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। স্পষ্ট যে, বজ্রপাত একটি ভয়ানক প্রাকৃতিক ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীতে বজ্রপাতে যত মানুষ মারা যায়, তার এক-চতুর্থাংশই বাংলাদেশে। বজ্রপাতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় বাংলাদেশে। হাওর-বাঁওড় ও বিল এলাকার জেলাগুলোতে বজ্রপাতে মৃত্যু বেশি। ঝড়-বৃষ্টির সময় খোলা মাঠ, জলাশয়, নৌকা ও পথঘাটে যারা চলাচল করে তারাই এর শিকার। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে বজ্রপাতের ঘটনা ১৫ শতাংশ বেড়েছে।

বজ্রপাত নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এর বিস্তৃতি ও তীব্রতা বেড়ে চলছে, যা মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করছে। তথ্য অনুযায়ী, একেকটি বজ্রপাতের সময় প্রায় ৬০০ মেগা ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য মাত্র ১০০ ভোল্ট বিদ্যুৎই যথেষ্ট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে বড় বড় বিল-হাওরে বজ্র এসে পড়ত। কিন্তু এখন লোকালয়েও বাজ পড়ছে। উদহারণস্বরূপ বলা যায়, পুকুরের পাড়ে কেউ দাঁড়িয়ে আছেন, তার ওপর এসে বাজ পড়ছে। এগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রক্রিয়ারই অংশ। তবে বজ্রপাত সব জায়গায়ই বেশি ঘটে না। হাওর-বাঁওড় অঞ্চল বজ্রপাতপ্রবণ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। বিশেষত, সুনামগঞ্জ ও রাজশাহীর কিছু এলাকায় বজ্রপাত বেশি হচ্ছে। এছাড়া নদীর আশপাশে বজ্রপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে। সবসময়ই এমনটা হয়ে আসছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, প্রতি বছর গড়ে বজ্রপাতে ২৬৫ জনের মৃত্যু হচ্ছে। গত একযুগে এ সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। এদিকে আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে, বজ্রপাতের অন্যতম কারণ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। সেক্ষেত্রে ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বজ্রপাতের আশঙ্কা বেড়ে যায় অন্তত ১২ শতাংশ। এবার দেশ তাপদাহ চলছে, তাই বজ্রপাতের তীব্রতা বাড়বে বলে ধারণা করা যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মোবাইল ফোন ব্যবহার বৃদ্ধি, অতিরিক্ত জনঘনত্ব ও বজ্রপাত মৌসুমে মাঠে-ঘাটে এবং জলাশয়ে মানুষের কর্মক্ষেত্রে সম্পৃক্ততা বেশি হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।

বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ রুখে দেয়া সম্ভব নয়। তবে হতাহতের ঘটনা সচেতনতা ও সতর্কতার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এজন্য কিছু ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। বজ্রপাত রোধে সারা দেশে মাঠে মাঠে বজ্রনিরোধক টাওয়ার নির্মাণ করতে হবে। গাছ রোপণ করতে হবে। আর হাওর অঞ্চলে যেহেতু বজ্রপাত বেশি হয়, সেখানে প্রচুর ছাউনি নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া বজ্রপাত নিয়ে মানুষের মধ্যে আরও বেশি সচেতনতা দরকার। ‘আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম’ (প্রাক-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা)-এর মাধ্যমে মানুষকে রক্ষার পদক্ষেপ নেয়া যায়। উদ্যোগটি সরকারকেই করতে হবে। মানুষকে প্রকৃতিবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে। সবার সচেতনতার মাধ্যমেই সম্ভব বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত