মোটরসাইকেলে উভয় সংকট

শক্তিশালী করতে হবে গণপরিবহন ব্যবস্থা

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দ্রুত যাতায়াতে মোটরসাইকেল জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখন ভাড়ায়ও চলছে এই যানটি। ফলে এটি ব্যবহারের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি ঘটছে হতাহতের ঘটনাও। উল্লেখ্য, ঈদুল আজহায় গত বছর বিনা অনুমতিতে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ ছিল। এতে যানবাহন সংকটে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। এ সংকট কাজে লাগিয়ে ঈদযাত্রায় পথে নামা ফিটনেসবিহীন গাড়ি বিকল হয়ে ঘটেছে অনেক দুর্ঘটনা, হয়েছে প্রাণহানি। তাই এবারের ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ দেয়নি সরকার। এতে মহাসড়কে অবাধ মোটরসাইকেল চলাচলে এবারও দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোটরসাইকেল উভয় সংকট তৈরি করেছে। এ দ্বিচক্রযানটি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিলে অন্যান্য যানবাহনে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ে। যানবাহন সংকটে বাড়ে ভোগান্তিও। আবার মোটরসাইকেল অবাধে চললে, গতির কারণে সেটিও হয় মৃত্যুর কারণ। এক হিসাবে, এবার ঈদের আগে-পরে ছুটির তিন দিনে ৩২ জনের প্রাণ গেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। অন্যান্য দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২ জন। যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছেন, এবার ঈদযাত্রা যানজটমুক্ত ছিল। ঈদের আগে টানা তিনদিনের ছুটি এবং মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় যানজট হয়নি। অন্তত ৩০ লাখ যাত্রী বাইকে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় গেছেন। এতে যান সংকট এবং যানজট দূর হলেও মোটরসাইকেল সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনাও প্রাণহানি বেড়েছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির গত বছরের পরিসংখ্যান বলছে, সেবার কোরবানির ঈদের আগে-পরে ১৫ দিনে ৩১৯ দুর্ঘটনায় ৩৯৮ জন নিহত হন। প্রাণহানির এ সংখ্যা ছিল তার আগের ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এসব দুর্ঘটনার ৪৪ শতাংশে মোটরসাইকেলের সংশ্লিষ্টতা ছিল। নিহতদের ৩৪ দশমিক ৮৫ শতাংশের মৃত্যু হয় বাইক দুর্ঘটনায়। এদিকে সহযোগী পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, এবার ঈদের ছুটির তিন দিনে ৭২ শতাংশ প্রাণহানি হয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব বলছে, গত বছর ২ হাজার ৯৭৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩ হাজার ৯১ জন, যা মোট প্রাণহানির প্রায় ৪০ শতাংশ। ওই বছর ৪৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনায় ছিল মোটরসাইকেলের সংশ্লিষ্টতা। গত কোরবানির ঈদে তীব্র যানজট হয় বঙ্গবন্ধু সেতুর দুই প্রান্তে। সে সময় এক জেলা থেকে অন্য জেলায় মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় যান সংকটে পড়েন লাখ লাখ মানুষ। এক পর্যায়ে ঢাকার অভ্যন্তরীণ রুটে চলা লক্কড়-ঝক্কড় বাস, পিকআপ, ট্রাকে করে গ্রামের পথ ধরেন তারা। এ কারণে তীব্র যানজট ও ভোগান্তি হয়েছিল। কিন্তু এবার এ ভোগান্তি ছিল না। এই অবস্থায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ততা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ এর সুবিধা ও অসুবিধা দুটি দিকই রয়েছে।

জানা গেছে, মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা করতে যাচ্ছে সরকার। তা সময়োপযোগী হবে এটা সবার প্রত্যাশা। সাধারণত দাম কম থাকায় মোটরসাইকেল হয়ে উঠেছে সহজলভ্য। সাধারণ মানুষ এই দ্বিচক্রযান কিনছেন। এর মাধ্যমে হচ্ছে কর্মসংস্থান; কিন্তু বাড়ছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। বিআরটিএর পরিসংখ্যান বলছে, গত এক যুগে গড়ে প্রতিবছর পৌনে ৩ লাখ মোটরসাইকেলের নিবন্ধন হয়েছে। আর সারাদেশে নিবন্ধিত ৫৬ লাখ যানবাহনের মধ্যে ৪১ লাখই মোটরসাইকেল। বিষয়টি অকল্পনীয় হলেও বাস্তব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ৩০ গুণ। মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে; নয়তো দুর্ঘটনা বাড়তে থাকবে। এর বিপরীতে শক্তিশালী করতে হবে গণপরিবহন ব্যবস্থা। মোটরসাইকেলের ওপর নির্ভরতা মানে গণপরিবহনের অকার্যকারিতা। এই বিবেচনা সামনে রেখেই পরিবহনী নীতিমালা বিন্যস্ত করা জরুরি।